ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যুদ্ধে নেমে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২০
যুদ্ধে নেমে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা

ধামরাই (ঢাকা): বর্তমানে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। আর এ যুদ্ধের সৈনিক হলো চিকিৎসকসহ এই ক্ষাতের সব কর্মীরা। কিন্তু এ যুদ্ধে আশপাশের মানুষের কাছে তিরস্কারের শিকার হচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত পড়তে হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতায়। সব পিছু টান ভুলে সবসময় মানুষের সেবায় যুদ্ধ (চিকিৎসা) করে যাচ্ছেন তারা।

এমনটাই ঘটেছে ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে। প্রতিদিন কর্মস্থল হাসপাতাল থেকে বাসা ও বাসা থেকে হাসপাতালে যেতে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়।

অনেক কর্মীই এই প্রতিবন্ধকতার মুখে আসতে চাচ্ছেন না আবার অনেকেই সব কিছুকে তুচ্ছ করে হাসপাতালে আসছেন নিজের দ্বায়িত্ব পালন করতে।

শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকার ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা'র কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার হাসপাতালের সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি জানতে চাইলে অসহায় কন্ঠে বাংলানিউজ প্রতিবেদকে এমন কথা জানান তিনি।

ডা. নূর রিফফাত বাংলানিউজকে জানান, তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ প্রায় ২৫০ জন কর্মী রয়েছেন। তারা কয়েক ধাপে ও সিফটিং ভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ ধামরাইয়ে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থলে আসতে অনিহা প্রকাশ করছেন৷ এতে হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে বাকি কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে৷

কেন স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থলে আসতে চাইছে না? জানতেন চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি আমরা সবাই যুদ্ধে নেমেছি। আমার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব চিকিৎসক ও কর্মীরা সুন্দরভাবে ধামরাইয়ের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু গতকাল আমাদের হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীসহ একজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় আশপাশের মানুষের নানা কথা শুনতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের৷ এমনকি অনেক কর্মী বাসায় গেল বাড়িওয়ালারাও বাড়িতে আসতে মানা করছেন। আর হাসপাতালে আসতে ও যেতে তো সাধারণ মানুষের কাছে কত কি শুনতে হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান আরও বলেন, এর মধ্যেই অনেকেই কর্মক্ষেত্রে আসছেন আবার অনেকেই আসছে না। যারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছে না তাদের জায়গায় অন্য কোনো কর্মীকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷ এমন চলতে থাকলে আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তো মনোবল নষ্ট হয়ে যাবে। রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মত কাউকে পাওয়া যাবে না।

দেশের এ দুর্যোগ মোকাবিলায় চিকিৎসকদের উৎসাহ ও সাহায্য করা খুবই প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক আরও বলেন, আমরা রোগকে ঘৃণা করি, রোগীকে নয়। ধামরাই উপজেলায় এ পর্যন্ত ২জন ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেছে। এদের ১ জন স্বাস্থ্য কর্মী, যিনি ধামরাইবাসীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ১ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪ জন ও হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন ১৬ জন।

এসময় তিনি ধামরাইবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদেরই হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা আপনাদের স্বার্থেই নিজের জীবন বাজী রেখে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করুন। আপনাদের মানবিক আচরণই আমাদের আরও সাহসী করবে।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার পরিদর্শক (ওসি) দিপক চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, কোনো চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী অথবা জরুরিসেবা দেওয়া ব্যক্তিকে হয়রানি করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।