শারীরিক সমস্যা অনুযায়ী তাকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে পরে তাকে এক্স-রে করানো হলে করোনার কিছু উপসর্গ দেখতে পান চিকিৎসকরা।
সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও অন্য রোগীসহ অনেকেই তার সংস্পর্শে আসেন। নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এবার ওই রোগীর স্ত্রী ও ছেলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে দায়িত্বরতদের মধ্যে যারা যারা তার সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রকাশ্যে নিয়মিত ব্রিফিংও বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের গেটে করোনা ভাইরাসের রাজশাহীর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা ব্রিফিং করতেন।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বুধবার (২২ এপ্রিল) থেকে আর সরাসরি ব্রিফিং না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সেটি অনলাইনে করার চিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন করোনা নির্ণয় ও চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. আজিজুল হক আযাদ।
মঙ্গলবার হাসপাতালে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ডা. আজাদ বলেন, ১৭ এপ্রিল ওই রোগী জ্বর ও প্রস্রাবের সমস্যার কথা বলে হাসপাতালে এলে তাকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি করোনা আক্রান্ত তা বুঝতে আমাদের দেরি হয়ে যায়। কারণ তিনি রাজশাহীর বাইরে থেকে এসেছেন বা বাইরে থেকে আসা কারও সংস্পর্শে গিয়েছেন এমন কোনো তথ্য ভর্তির সময় তিনি আমাদের জানাননি। তিনি জ্বর ও প্রস্রাবের সমস্যার কথা বলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেভাবেই তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তবে তার এক্স-রে করার পর করোনার উপসর্গ কিছুটা বোঝা যায়। পরে তাকে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানোর পর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে করোনা শনাক্ত হয়।
ডা. আজাদ আরও বলেন, এই রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত ভালো আছেন। সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে তার স্ত্রী এবং ছেলেও রয়েছেন। তাদের আজ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা হবে তাদের অবস্থা। এছাড়াও সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে আরও যে ৯ জন ভর্তি রয়েছেন তারা সুস্থ আছেন। তাদের নমুনায় করোনা পাওয়া যায়নি।
এদিকে ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সসহ কমপক্ষে ৪০ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এর সংখ্যা উল্লেখ করেননি রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ওই রোগী সাধারণ ওয়ার্ডে থাকায় অনেকেই তার সংস্পর্শে এসেছেন। যারা তার সংস্পর্শে এসেছেন তাদের প্রত্যেককে কোয়ারেন্টিনে রাখার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি। যারাই সংস্পর্শে এসেছেন সবাইকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এদিকে সোমবার পরীক্ষার পর রাজশাহীতে আরও তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ। এ নিয়ে রাজশাহীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। রাজশাহী জেলার আটজনের মধ্যে পুঠিয়া উপজেলায় ৫ জন, বাঘায় একজন, বাগমারায় একজন ও মোহনপুরে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ। আর আক্রান্তরা সবাই রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এসেছেন।
রাজশাহীতে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি উল্লেখ করে ডা. আজিজুল হক আযাদ বলেন, রাজশাহীতে আক্রান্ত অপর সাত রোগী ভালো আছেন। সবার চিকিৎসা চলছে। তাদের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ১৪ দিন অতিবাহিত হলে প্রত্যেকের দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২০
এসএস/এএটি