ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সহকারী ইনচার্জ রামুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানকার ২ জন স্টাফকে পিপিই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আসলে রেইনকোট।
রামু বলেন, রেইনকোটকে পিপিই বলে কিনা আমরা জানি না। এছাড়া হ্যান্ড গ্লাভস দিলেও, আমরা ভালো মানের মাস্ক পাইনি। আর আমাদের যে দুইজনকে পিপিই দেওয়া হয়েছে তাও ১৫ দিন হয়ে গেছে। সেগুলোই প্রতিদিন ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আবার পরের দিন পরে কাজ করতে বলা হয়েছে। মর্গের স্টাফদের জন্য বিশেষ গামবুটও দেওয়া হয়নি। এগুলোর জন্য কাজ করতে অনেকটা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। অথচ আমরা শুনেছি পিপিইসহ অন্যান্য জিনিস ২৪ ঘণ্টা ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হয়। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, সুরক্ষা সামগ্রীর স্বল্পতা আছে। ফলে একই পিপিই বারবার ধুয়ে ব্যবহার করছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টি মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়। তবে দেশে উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতি ও অঘোষিত লকডাউনের কারণে মানুষ রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে না। এজন্য সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। সেই সাথে কমেছে হত্যা, আত্মহত্যা, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মৃত্যুর মতো নিত্যদিনের ঘটনাগুলোও। এতে মর্গ স্টাফদের কাজের চাপ কমেছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গ ইনচার্জ যতন বলেন, আমাদের এখানে মর্গে ৪ জন কাজ করেন। সবাইকেই পিপিই দেওয়া হয়েছে। তবে তা কতটুকু ভালো মানের তা জানি না। করোনার আগে দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২টি মৃতদেহের ময়না তদন্ত করতাম। এখন গড়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টা ময়না তদন্ত করা হয়। ডাক্তাররা আমাদের বলেছেন, কেউ মারা যাওয়ার ৩ ঘণ্টা পর মৃতদেহে কোনো ধরনের ভাইরাস, জীবাণু থাকে না। আর মারা যাওয়ার পর কোনো মৃতদেহ মর্গে আসতে আসতেই ৩ ঘণ্টার ওপরে লেগে যায়। তারপরও নিরাপত্তার জন্য আমরা আরও কিছু কাজ করি। এখন মর্গে কোনো মৃতদেহ এলে প্রথমে ব্লিচিং পাউডার মেশানো পানি লাশের মুখে ও শরীরে ঢেলে দিই। আধা ঘণ্টা এভাবে রাখার পর আবার ব্লিচিং পাউডার, রিন পাউডার ও গরম পানি মিশিয়ে লাশের মুখে ঢালি, তারপর ময়না তদন্তের কাজ শুরু করি।
মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গ ইনচার্জ শ্যামল জানান, সেখানকার মর্গে কাজ করেন ২ জন। দুজনকেই পিপিই দেওয়া হয়েছে। তবে তা মানসম্পন্ন কিনা তা বলতে পারছেন না। তারাও একটি পিপিই বারবার ধুয়ে ব্যাবহার করছেন।
মর্গ কর্মচারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, আমাদের শতভাগ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নেই। পিপিই থাকলেও এর সাথে এন-৯৫ মাস্ক নেই, যেটি আমাদের জন্য বিশেষ দরকার। তারপরও কর্মচারী ও নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে যতটুকু পারি চেষ্টা করেছি। ময়না তদন্তের সময় পিপিইর সঙ্গে হাতে ডাবল গ্লাভস, ডাবল মাস্ক পরে নেই। কোনো মৃতদেহ মর্গে আসলে প্রথমেই ব্লিচিং পাউডার দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে মৃতদেহের নাকে-মুখে দিয়ে রাখি। এছাড়া মর্গের রুমের ফ্যান, এসি সব বন্ধ করে রাখি। যাতে কোনো ভাইরাস থাকলেও তা ছড়াতে না পাড়ে।
মৃতদেহে করোনা ভাইরাস থাকে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, বলা হচ্ছে মৃত্যুর ৫/৬ ঘণ্টা পর মৃতদেহে করোনা ভাইরাস থাকে না। তবে তার জামাকাপড়েতো থাকতে পারে। ফলে সাবধানতা অবলম্বন করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
এজেডএস/এইচজে