জানা যায়, বৃহস্পতিবার (০৭ মে) থেকে ইমপালস হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বুধবার (০৬ মে) ওই হাসপাতালের কয়েকজন নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক সিনিয়র স্টাফ নার্স ফোনে বাংলানিউজকে এসব অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের নিয়ে একটি মিটিং করেছে। তারা জানিয়েছেন, হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হবে। পরে মিটিংয়ে আমরা বলেছি, যেহেতু এটি সরকারের সিদ্ধান্ত আমরাও মেনে নিয়েছি। আমরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত আছি। তবে আমাদের বেতন-ভাতা বাড়াতে হবে ও ডিউটি করার সময় নিরাপত্তা সামগ্রীগুলো নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে আবার ১৪দিন ডিউটি করবে। সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
তারা আরও বলেন, এই বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে মিটিংয়ে জানানো হলে, তারা মিটিংয়ের সময় রাজি হলেও আমাদের লিখিতভাবে কোনকিছু জানাননি। কারণ নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু লিখিত আকারে জানানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতালের পাশেই আমাদের হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আমরা বারবার যোগাযোগ করলেও তারা কোনো জবাব দেয়নি। আমরা এখনো ডিউটিতে আছি আমাদের অনেকে হাসপাতালের ভেতরে ডিউটি করছে। যাদের নাইট ডিউটি আছে তারা যেতে পারছেন না। আমরা এখনো এপ্রিল মাসের বেতন পাইনি। আমাদের হাসপাতালে এক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী এসেছিল। ওই রোগীর সংস্পর্শে যারা ছিল তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছিল। এই কারণে এখন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন,১২ দিনের বেতন দেবে। বেতনের বিষয়ে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ তেমনভাবে আমাদের কোনো আশা দেখাতে পারেনি। তাই কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিলে আমাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে মৌখিকভাবে যে সিদ্ধান্ত তারা দিয়েছে আমরা কীভাবে তা বিশ্বাস করবো। এটা অফিশিয়াল নিয়ম অনুযায়ী আমাদের লিখিত আকারে দিতে হবে।
এই ব্যাপারে ইমপালস হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. খাদিজা আক্তার জুমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (০৭ মে) থেকে হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবকিছুই করা হচ্ছে। হাসপাতালে যারা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনিচ্ছুক তাদের বলে দিয়েছি হোস্টেল ছেড়ে দিতে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সদের সব দাবি দাওয়া মেনে নিয়েছি। তাদের বেতন-ভাতা ডবল করে দেওয়া হবে জানিয়েছি। তবুও তারা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় একটু কঠোর সিদ্ধান্তে আমাদের যেতে হয়েছে। সরকার আমাদের পিপিই-মাস্ক-গ্লাভস সবই সাপ্লাই দিচ্ছে। তাহলে কেন তাদের দেওয়া হবে না। তারা যেসব অভিযোগ করছে সবগুলো মিথ্যা।
এপ্রিল মাসের বেতন এখনো নার্সরা পায়নি। তাদের ওই মাসের ১২ দিনের বেতন দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে যতদিন ডিউটি করেছে ততদিনের বেতন পাবে। এতদিন তো হাসপাতালে রোগী ছিল না।
হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে সেটা মেরামত করা হচ্ছে।
এদিকে রাত সাড়ে আটটার দিকে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে এসে নার্সদের হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান জানান, ওই হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। বেতন ভাতা বাড়ানোর জন্য নার্সরা একটা দাবি করেছে। সেই দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২০
এজেডএস/এইচএডি/