তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস.এম রমিজ আহমেদ। তার দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধান সহকারীকে বিল-ভাউচার করতে বললেও, বিষয়টি না বোঝায় তিনি সেটিতে ভুল করেছেন।
গত ২১ এপ্রিল জেলা সিভিল সার্জন বরাবর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার একটি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৭টি নমুনা বরিশালে পাঠানো হয়। আর প্রতিবেদনের রোগীর নাম ও ঠিকানার ঘরে ডা. এস.এম রমিজ আহমেদসহ বেশ কয়েকজন স্টাফের নাম রয়েছে।
এছাড়া ১৮ এপ্রিল সকাল ও বিকেলে দু’বার ডা. রমিজ ও সাইদুল ইসলাম নামে ৩৭ বছরের এক ব্যক্তির নমুনা মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বরিশাল সদরে পাঠানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৭ ও ১৮ এপ্রিল মোট ১১টি নমুনা মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বরিশাল সদরে আলাদাভাবে পাঠানো হয়। যার মধ্যে ১৭ এপ্রিল সকালে ৩টি ও বিকেলে ৩টি এবং ১৮ এপ্রিল সকালে ৩টি ও বিকেলে ২টি নমুনা আলাদাভাবে পাঠানো হয়। ফলে ১৭ এপ্রিল ৫ হাজার টাকা করে ৩০ এবং ১৮ এপ্রিল ২৫ হাজার টাকা যাতায়াত খরচ দেখানো হয়েছে।
এ অভিযোগের বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএম রমিজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মূলত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা একটি প্রত্যন্ত ও নদীবেষ্টিত এলাকা। এখানে হাতে গোনা কয়েকটা ছাড়া এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়ন, এমনকী এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামেও যেতে হয় নদী পাড়ি দিয়ে। কর্তৃপক্ষের জলযান না থাকায় নমুনা সংগ্রহ করতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
‘আবার এখান থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবেও পাঠাতে হয় বিশাল নদীপথ পাড়ি দিয়ে। আর লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় স্পিডবোটে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে দীর্ঘ এই পথ। ’
তিনি বলেন, এ অবস্থায় একটি বেসরকারি সংস্থা মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বরিশালে নমুনা নিয়ে যাওয়ার জন্য পথের খরচ ৫ হাজার টাকা করে দিতে রাজি হয়। কিন্তু ভাড়া করা স্পিডবোট আর হাসপাতাল থেকে ঘাট এবং পরবর্তী ঘাট থেকে ল্যাবে আসা যাওয়ার খরচ এর চেয়ে বেশি পড়ে যায়। তাই করোনা সংকটকালীন ব্যবহারের জন্য চরগোপালপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সামসুল বারী মনির তার স্পিডবোটটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। ওই বোটটির তেল খরচ, চালক ও নমুনা নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের খরচ দিয়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যেই এখন কাজটি চালানো হচ্ছে।
যে সংস্থাটি টাকা দিচ্ছে তারা মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বরিশালের ল্যাবে নমুনা পাঠানোর খরচ ছাড়া আর কোনো ব্যয় না দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এর বাইরে উপজেলার ভেতরে যেখানে নদীপথে যেতে হয়, সেখানে ওই বোটটি ব্যবহার করা হয়। তবে বোট ব্যবহারের জন্য যে তেল খরচের প্রয়োজন হয় তা না দিতে পারায় বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই ল্যাবে নমুনা পাঠানোর বিলের সঙ্গেই নদীপথে দূরে গিয়ে রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করার খরচের টাকা দেখিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
‘তবে কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছিল সেভাবে না করে হেডক্লার্ক বা প্রধান সহকারী অন্যভাবে বিলটি করেছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক নমুনা সংগ্রহকারী ব্যক্তির নামের সামনে তিনি যে খরচ দেখিয়েছেন সেটা শুধু প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে নদীপথে বোটটি ব্যবহার করে যেতে হয়েছে সেখানকার জন্য প্রযোজ্য ছিল। কাজের চাপে আমিও বিষয়টি ভালোভাবে দেখিনি। তবে যখন বিষয়টি নজরে এসেছে তখন সেটিকে আবার ঠিক করে গত ৩ মে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ’
এ বিষয়ে জানতে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি তা রিসিভ করনেনি।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃঞ্চ মণ্ডল বলেন, নদীবেষ্টিত বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীসহ কয়েকটি জায়গা থেকে সংগ্রহ করা নমুনা ল্যাবে পাঠানো খুবই কষ্টকর। নদীবেষ্টিত এসব জায়গাতে আমাদের নিজস্ব কোনো বোট নেই। গোটা বরিশাল বিভাগে আমাদের কোনো ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সও নেই।
আর ল্যাবে নমুনা পাঠাতে স্পিডবোটে যাতায়াতের জন্য আমাদের নিজস্ব কোনো অর্থায়নের সুযোগ নেই, তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে একটি বেসরকারি সংস্থার যোগযোগের জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। সে টাকা আমরা হিসাব অনুযায়ী খরচ করছি। কারো একদিনে দু’বার বিল করা এবং উত্তোলনের সুযোগ নেই। একদিনের জন্য ৫ হাজার টাকাই বরাদ্দ, এর বেশি কেউ নিতে পারবে না। আর সংস্থার টাকাও শেষের দিকে, যা শেষে কীভাবে মেহেন্দিগঞ্জ-রাঙ্গাবালী থেকে নমুনা ল্যাবে আনা হবে সেটিও এখন ভাবাচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২০
এমএস/এএ