এর আগে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসার হাসপাতালগুলোতে নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি বিবেচনা করে সেই মাস্ক ও পিপিই প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে সিঅ্যান্ডএফ’র সঙ্গে যোগসাজশ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সিএমএসডির পিএসহ ১৪ কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক (ভাণ্ডার ও সরবরাহ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় তিন মাসের মধ্যে ১ লাখ পিস এন-৯৫ মাস্ক (৩এম ৮২১০ সিএন) সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ দেয় ভাস্ট বাংলাদেশ লিমিটেডকে। এছাড়াও একই মানের ১ লাখ মাস্ক সরবরাহ করার কাজ পায় আরও দু’টি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে নতুন পরিচালকের যোগদানের পর শনিবার (২৩ মে) সিএএসডির ৩০ জন নিয়মিত সরবরাহকারীকে ডাকেন। সব ঠিকাদারকে নিয়ে বেলা ১১টায় মিটিং শুরু করার কথা বললেও মিটিং শুরু করে দুপুর একটায়। ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত তারা পাঁচজন সরাবরাহকারীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন দ্বিতীয় তলায়। এর কিছুক্ষণ পর সিএমএসডির তালিকাভুক্ত সব ঠিকাদারের সঙ্গে বৈঠক করার কথা থাকলেও ক্রয় বিভাগের উপ-পরিচালক জিয়াউল হক সহকারী পরিচালক মেজবাউর রহমান পাশের রুমে বসে আলাদাভাবে এন-৯৫ মাস্কের কার্যাদেশ পাওয়া সকল ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল্যতালিকা ভঙ্গ করে বিশ্ববিখ্যাত থ্রিএম কোম্পানির মাস্ক মূল্য ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় সরবরাহের প্রস্তাব দেন।
অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারণ করা মূল্য তালিকা রয়েছে এসব মাস্কের দাম ১০০০ টাকা। এসময় রুমের বাইরে থাকা কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদাররা চেঁচামেচি করলে তারা পুলিশের ভয় দেখায়। এমতাবস্থায় বেশিরভাগ ঠিকাদার মিটিং না করেই বেরিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে ভাস্ট বাংলাদেশের মালিক কামরুজ্জামান সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, আমার ১ লাখ পিস মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পাওয়ার পর অন্য আমদানিকারকের কাছে থেকে ৮৫০ টাকা করে পিস কিনে আমি ২৫০০ মাস্ক সাপ্লাই দেই। এরপর সব নিয়ম ও রপ্তানিকারকের সার্টিফিকেট জমা দিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করি। ব্যাংক থেকে ৬ দশমিক ৭৫ ডলার দরে ১ লাখ পিস এন-৯৫ মাস্কের এলসি করেছি, উক্ত এলসি ব্যাংক কমিশন সাড়ে তিন লাখ টাকা ও ইন্স্যুরেন্স কমিশন সাড়ে তিন লাখ মোট সাত লাখ টাকার পুরোটাই জলে গেলো।
তিনি বলেন, কার্গো বিমান ভাড়াসহ একটি মাস্ক বাংলাদেশে আমদানির খরচ পড়ে ৬১০-৬৫০ টাকা। সুতারাং প্রত্যেক পিছে ১০০ টাকা লস দিয়ে তো এখানে সাপ্লাই দেওয়া যাবে না। আমি সবশেষ ৮৫০ টাকা বলেছি যদি স্যারদের মন চায় মাস্ক নেবেন। না নিলে আমার মাস্ক ফেরত দেবেন, আমি চলে যাবো। এখানে মাস্ক সরবরাহের পর কবে বিল পাবো তা জানি না, সুতরাং সাড়ে ছয় কোটি টাকার অন্তত ছয় মাসের ব্যাংক ইন্টারেস্ট গুনতে হবে। এছাড়া আরো খরচ রয়েছে। তাই এর কমে আমি না, কোননো ঠিকাদারই আসল পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন না।
‘কোনো প্রকার নকল মাস্ক কেউ সরবরাহ করে ডাক্তারদের জীবন হুমকির মুখে ফেলার চেষ্টা করলে আমি সবার আগে ক্রয় বিভাগের এডি ও ডিডির বিরুদ্ধে মামলা করবো। কারণ সরকার তাদের টাকা বাঁচানোর জন্য বসায়নি, বসিয়েছে ডাক্তারদের জীবন বাঁচানোর জন্য’, যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে সিএমএসডির ক্রয় বিভাগের সহকারী পরিচালক মেজবাউর রহমান বলেন, কেনাকাটার যেসব নিয়ম আছে সেগুলো মেনেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। খোঁজ-খবর নিয়ে পরে বলতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এসই/জেআইএম/এএ