ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেকে দৈনিক ৫০ করোনা রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন, আছে ১৪টি

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
ঢামেকে দৈনিক ৫০ করোনা রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন, আছে ১৪টি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবন করোনা ইউনিট-২ এ ১৪টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড থাকলেও করোনা ইউনিট-১ এ কোনো আইসিইউ বেড নেই বলে দাবি করেন একটি সূত্র। সঠিক সময় আইসিইউ না পাওয়ায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।

প্রতিদিন আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন রোগীর জন্য আইসিইউর অনুরোধ করছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ জন রোগীর আইসিইউ লাগবে বলে চিকিৎসকরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন।

শুক্রবার (৫ জুন) ঢামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানান, হাসপাতালে দু’টি ভবনকে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। একটি হচ্ছে বার্ন ইউনিট করোনা ইউনিট-১ ও অপরটি হাসপাতালের নতুন ভবন করোনা ইউনিট-২।

ওই সূত্র জানান, হাসপাতালের নতুন ভবন করোনা ইউনিটে শুক্রবার পর্যন্ত ৫০১ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই কোভিড রোগী। এছাড়া বার্ন ইউনিটের আছে ৬২ জন রোগী। সেখানেও বেশিরভাগই কোভিড রোগী।

ঢামেক হাসপাতালে প্রথম করোনা ইউনিট করা হয় বার্ন ইউনিট খালি করে। সেখানেই তখন আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন রোগীদের সরাসরি ভর্তি করা হতো। নতুন ভবনকে যখন করোনা ইউনিট করা হয়, তখন দু’টি ভবন রোগীদের জন্য ভাগ করে দেওয়া হয়। সেসময় বার্ন ইউনিটকে করা হয় সার্জারি ইউনিট। কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের সার্জারি দরকার হলে, তাদের জন্য এ ইউনিট। আর নতুন ভবন করোনা ইউনিট করা হয় অন্য কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য।

ওই সূত্র আরও জানান, নতুন ভবন করোনা ইউনিট করার সময়, বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলার আইসিইউর ভেন্টিলেটর সব খুলে নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় সেগুলো লাগিয়ে কোভিড রোগীদের জন্য মোট ১৪টি আইসিইউ বেড করা হয়। তারপর থেকে সরাসরি করোনা রোগীদের জন্য বার্ন ইউনিটে কোনো আইসিইউর সাপোর্ট নেই। তবে বার্ন ইউনিটে নারী ও পুরুষ আলাদা মোট ২৪টি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) রয়েছে।

এছাড়া, রয়েছে শিশু এইচডিইউ ও আইসিইউর ওয়ার্ডকে এইচডিইউ করা হয়েছে। প্রতিদিন চিকিৎসকরা ১৫ থেকে ২০ জন রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে বলে ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন। কিন্তু নতুন ভবনে ১৪টি বেডের আইসিইউ সব সময় রোগী দিয়ে পূর্ণ থাকে। তাই আইসিইউ না পেয়ে অধিকাংশ রোগীকে ওয়ার্ডে থাকতে হচ্ছে। কেউ অক্সিজেনের মাধ্যমে সুস্থ হচ্ছেন, কেউ মারা যাচ্ছেন। এভাবেই চলছে বর্তমান পরিস্থিতি।

গত ৩ জুন গাজীপুর বোর্ড বাজার এলাকার বাসিন্দা হাজী মতিউর রহমান (৬০) নামে কোভিড সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে নিয়ে তার জামাতা মো. ইকবাল হোসেন নতুন ভবনের ছয় তলায় ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান। রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় চিকিৎসকরা রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লেখেন জরুরি ভিত্তিতে তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। পরে ওই ভবনের তিনতলায় নিয়ম অনুযায়ী আইসিইউ বেড খালি না থাকায়, সিরিয়াল খাতায় রোগীর নাম লেখান তার জামাতা।

শুক্রবার মধ্যরাতে ইকবাল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আইসিইউ পাইনি। আমার মতো অনেক রোগীর স্বজন সিরিয়ালে আছে। কিন্তু আইসিউতে সিট খালি নেই। ’

এ ব্যাপারে কথা হয় ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদের সঙ্গে।

তিনি জানান, প্রতিদিনই চিকিৎসকরা কোভিড আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন মিলে আনুমানিক ৩০ থেকে ৫০ জন রোগীর আইসিইউ লাগবে বলে ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন। ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের সেন্ট্রাল অক্সিজেনে কাজ না হলেই চিকিৎসকরা আইসিইউর কথা লেখেন। রোগীর স্বজনরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নতুন ভবনের তিন তলায় আইসিইউ সেকশনে গিয়ে দেখেন ১৪টি বেডের একটিও খালি নেই। তবুও নিয়ম অনুযায়ী রোগীর নাম লিপিবদ্ধ করে আসেন।

তিনি আরও জানান, এমনও দেখা যায় আইসিইউতে থাকা রোগী স্থিতিশীল হতে এক-দেড় মাস লেগে যায়। আবার দেখা গেছে কেউ কেউ ১-২ ঘণ্টা পর মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালের নতুন ভবনে শুধু আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য আলাদা ১৪টি আইসিইউ আছে। আসন কম থাকায়, অনেক রোগী আইসিইউ দরকার হলেও ওয়ার্ডে অবস্থান করতে বাধ্য হন। তাছাড়া, হাসপাতালের পুরনো ভবনে ৩৫টি আইসিইউ বেড আছে। তবে সেগুলো সাধারণ রোগীদের জন্য।

ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, ‘বার্ন ইউনিট করোনা ইউনিট-১ এ পোস্ট অপারেটিভ দু’টি আইসিইউ বেড রাখা হয়েছে। কোভিড রোগীদের সার্জারির পর যদি আইসিইউ দরকার হয়, সেজন্য দু’টি বেড প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। আইসিইউ অনেক বড় একটি বিষয়। এটি এমন নয় যে কোনো কিছু কিনে এনে লাগিয়ে দিলাম। ’

তবুও কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আইসিইউর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০
এজেডএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।