সিভিল সার্জনকে ফোনে অবহিত করার পরও সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরিশাল নগরের বাজাররোড এলাকায় মারা যাওয়া এক ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সেখানে যেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছে।
আর এ সময় মরদেহ নিয়ে মৃতের স্ত্রী ও কন্যা ঘরেই অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাজাররোডে উপসর্গ নিয়ে যে ব্যক্তি মারা গেছেন, প্রথমে তার অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। এরপর সল্প সময়ের মধ্যেই একটি অ্যাম্বুলেন্স ম্যানেজ করে সেখানে পাঠাই। তবে সেখানে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই জানতে পারি ওই রোগী মারা গেছেন। ’
তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে থানা পুলিশের সদস্যদের সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঠানো হয়। রাত আনুমানিক পৌনে ৮টা থেকে তারা সেখানে রয়েছেন। এদিকে নমুনা সংগ্রহের জন্য সিটি করপোরেশন ও জেলা সিভিল সার্জনকে জানানো হয়। সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করা হলে তাদের টেকনোলজিস্ট করোনা পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। পরে সিভিল সার্জনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে নমুনা সংগ্রহ করতে সেখানে পৌঁছায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। ’
এদিকে স্থানীয় ও থানা পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে মারা যাওয়া ৪০ বছর বয়সের এ ব্যক্তির বাবা ৬৫ বছরের বৃদ্ধ দু’দিন আগে উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় স্বজন ও পুলিশ সদস্যদের। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম ও মেট্রো পুলিশের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে বৃদ্ধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সৎকারের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ কুমার দাস বলেন, ‘আজ যে ব্যক্তি উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন, দু’দিন আগে তার বাবাও মারা যান। সেসময়ও পুলিশ এসে তাৎক্ষণিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজও তারা জানার সঙ্গে সঙ্গেই এসেছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী যারা নমুনা সংগ্রহ করবেন, তাদের বিলম্বের কারণে মৃতদেহের সৎকারে বিলম্ব হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘এখন মৃত্যুর খবর পেলে কেউ আগের মতো এগিয়ে আসেন না। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলে তো পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়। শুরু থেকে মরদেহের পাশে মৃতের স্ত্রী আর শিশুকন্যা বসে রয়েছেন। ’
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নগরের মধ্যে নমুনা সংগ্রহের কাজটি মূলত সিটি করপোরেশনের। কারণ এখানে সিভিল সার্জনের কোনো হেলথ সেটআপ নেই। তারপরও বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি সেখানে লোক পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আর যেহেতু অফিস টাইমের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেনি, তাই জনবল প্রস্তুত করতেও কিছুটা সময় প্রয়োজন। পাশাপাশি সদরে কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই, সেটাও সংগ্রহ করে তারপর নমুনা সংগ্রহে লোক পাঠানো হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘আজকের ঘটনায় বিলম্ব হয়েছে সেটা বলা যাবে না, কারণ আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লোক পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ’
জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেউ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। রাতে একটু সমস্যা হতে পারে। তবে কাজের চাপ বেশি, জনবলও সহজলভ্য নয়। কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২০
এমএস/এফএম