সিটি করপোরেশেনের স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখার পর থেকে রোগীরা নগরের মধ্যে থাকা শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ও জেনারেল (সদর) হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকরা রোগীদের পরামর্শ দিলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল নগরের মুন্সি গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তাকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর হাসপাতালে নমুনা দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সেখানে সেদিনের নির্ধারিত পরিমাণ নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে গেছে, তাই তাকে সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গত কয়েকদিন ধরে শেবাচিম হাসপাতালের বহিঃবিভাগের টিকিট নিয়ে রোগীরা নমুনা দেওয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে আসছেন বলে জানান টেকনোলজিস্ট মো. নওয়াব।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শুধুভর্তি রোগী ও তাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে। কিন্তু আমরা বাইরের রোগীদেরও পরীক্ষা করছি। এটি করতে গিয়ে এ হাসপাতালে সক্ষমতার দ্বিগুণ নমুনা সংগ্রহ প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও (৯ জুন) ৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ’
সিটি করপোরেশন ও পুলিশ হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বরতরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর এ হাসপাতালের ওপর চাপ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন সক্ষমতার অধিক নমুনা সংগ্রহ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কিছু লোক জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছে। এ হাসপাতালের সাতজন টেকনোলজিস্টের স্থলে রয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে একজনকে দিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজটি করানো হচ্ছে। এছাড়া, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চারজন নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন, যাদের যাবতীয় ব্যয় আমরাই বহন করছি। ’
এ পরিস্থিতিতে প্রধান নমুনা সংগ্রহকারী বিভূতি ভূষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালের অবস্থা কী হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে সিটি করপোরেশনের ডা. শুভ্র খন্দকার বলেন, ‘মেয়রের নির্দেশে শুরু থেকেই নগর স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি এবং অনলাইন ও মোবাইলে করোনা উপসর্গ থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে যারা নগরের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের আইসোলেট করা, নমুনা সংগ্রহ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি আমাদের তিনজন টেকনোলজিস্ট করোনা পজিটিভ হওয়ায় নমুনা সংগ্রহের কাজটি বন্ধ রয়েছে। ’
বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মূলত গোটা জেলায় টেকনোলজিস্টের সংকট রয়েছে। বরিশালের ১০টি উপজেলার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালসহ সাতটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাতজন টেকনোলজিষ্ট রয়েছে। হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ এ তিন উপজেলায় কোনো টেকনোলজিস্ট নেই। তবে নমুনা সংগ্রহের জন্য ওই তিন উপজেলায় অন্য স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্পভাবে নমুনা নেওয়া হচ্ছে। আর যে উপজেলায় একজন রয়েছে, সেখানেও অন্য স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হয়েছে যেন কেউ অসুস্থ হলে বিকল্প লোক দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা যায়। ’
তিনি বলেন, শেবাচিম থেকে সম্প্রতি যে রোগীদের নমুনা দেওয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে, তাদের আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি না। তবে একজন টেকনোলজিস্টের পক্ষে এতো চাপ নেওয়া সম্ভব না। ’
অন্যদিকে অনেকে বলছেন, শেবাচিম হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা মিলিয়ে যেহেতু ২৪ জনের মতো টেকনোলজিস্ট রয়েছে, পিসিআর ল্যাব ও প্যাথলজি বিভাগের পর নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে জনবল নিয়োজিত করা উচিত। আর এজন্য প্রয়োজন সার্বিক সমন্বয়।
তবে কোথাও কোনো সমন্বয়হীনতা নেই জানিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, নতুন একজন টেকনোলজিস্ট বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনকে দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে কাজে লাগাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
এমএস/এফএম