একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৮ জন চিকিৎসক-নার্স-স্টাফ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা জেলার স্বাস্থ্যসেবা। যদিও করোনার কারণে জেলার হাসপাতালগুলোতে কমেছে সাধারণ রোগীর চাপ।
একদিকে জনবল সংকট, অন্যদিকে করোনার কারণে চিকিৎসকরা টানা ১৫ দিন ডিউটির পর চলে যাচ্ছেন হোম কোয়ারেন্টিনে। এতে সংকট আরও ঘণীভূত হয়ে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জনবল সংকট থাকলেও তা থেকে চিকিৎসক টেনে এনে জেলা সদর হাসপাতালে কোনোমতে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সংকট আরও ঘণীভূত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর হাসাপাতালে করোনা সংক্রমণের ভয়ে দীর্ঘদিন সরকারি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আর শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সেখানেও বন্ধ রয়েছে ওষুধ সরবরাহ। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে ল্যাব টেকনিশিোন সংকটের পাশাপাশি করোনা টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহে নিয়োজিতদের অনেকেই ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সম্প্রতি শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে এক চিকিৎসকসহ কয়েকজন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মরত। হাসপাতালের বিভিন্ন কর্নারে ঘুরে অন্য কোথাও কোনো চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। দোতলার পুরুষ, নারী ও শিশু ওয়ার্ডে মাত্র পাঁচ-ছয় জন রোগীর দেখা মেলে।
সে সময় চিকিৎসকের সাক্ষাৎ কিংবা ওষুধ না পেয়ে নিরাশ হওয়া বুড়িগোয়ালীনির বিলাল হোসেন বলেন, ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছিলাম চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দরকারি ওষুধ হাসপাতাল থেকে নেওয়ার আশায়। কিন্তু ওষুধ দেওয়ার কক্ষ বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগ থেকে পরামর্শ মিললেও ওষুধ না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ওষুধ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে কক্ষটি বন্ধ থাকায় আপাতত ওষুধ বিতরণ বন্ধ রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কক্ষটি পরিষ্কার করে পুনরায় ওষুধ বিতরণ শুরু হবে।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার রায়হানুল ইসলাম বলেন, মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। সম্প্রতি করোনামুক্ত হয়েছি। আসলে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় সবাই ভয় পাচ্ছেন- এটা স্বাভাবিকও বটে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে, সেবাপ্রার্থীরা অনেক সময় তথ্য গোপন করায় স্বাস্থ্যসেবা দিতেও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন চিকিৎসকরা। আবার, পিপিই পরে স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়েও প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক চিকিৎসক।
সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইতোমধ্যে সদর হাসপাতালের চারজন চিকিৎসকসহ আরও চারজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নমুনা দেওয়া হয়েছে আরও কয়েকজনের।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৮ জন চিকিৎসক-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে। আবার অনেকে তথ্য গোপন করে সেবা নিতে আসছেন। সব মিলিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত সেবাদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, শুধু আমাদের এখানে নয়, সমগ্র বিশ্বে একই অবস্থা। এর কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলো অবকাঠামোগত দিক থেকেও পিছিয়ে রয়েছে। এর কারণে সার্বক্ষণিক পিপিই পরে সেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে, আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০
এমআইএইচ/এএ