প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে পুরো মানবজাতির ত্রাহি অবস্থা। সীমিত আকারে বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে গেলেও কিছুদিন আগ পর্যন্ত পুরো পৃথিবী কার্যত লকডাউনে ছিল।
এখন পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেননি। ফলে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনা।
করোনা এমন একটি ভাইরাস যা শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। ফ্লুর মতো লক্ষণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, পেশী ব্যথা থেকে শুরু করে রোগীদের মধ্যে প্রচুর লক্ষণ দেখা দেয়। নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো কেন এবং কীভাবে দেখা দেয় সে সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এর একটি ছোট্ট গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত প্রায় সব রোগীর তিনটি সাধারণ লক্ষণ ছিল। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
গবেষণা
সিডিসি দ্বারা করা একটি নমুনা সমীক্ষায় ১৬৪ জনের স্বাস্থ্য পরমিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যারা ১৪ জানুয়ারি এবং ৪ এপ্রিল এর মধ্যে করোনা পজেটিভ বলে শনাক্ত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এই রোগ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়নি, তাই রোগীদের বিভিন্ন উপসর্গের বিষয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল এবং যেসব লক্ষণ খুব বেশি পরিচিত ছিল না, তা দেখা দিলেও জানাতে বলা হয়েছিল।
করোনাভাইরাসের সাধারণ লক্ষণগুলো কী?
সমীক্ষার ফলাফল অনুসারে, প্রায় ৯৯%, অর্থাৎ সমীক্ষা করা প্রায় সব রোগীই জানিয়েছেন যে, তাদের মধ্যে তিনটি লক্ষণের অন্তত একটি দেখা গেছে। সেই তিন লক্ষণ হল জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। এর মধ্যে ৪৫% বলেছেন যে, তাদের অসুস্থতার সময় তিনটি উপসর্গ একসাথে দেখা দিয়েছিল।
কাশি:
কাশি করোনাভাইরাসের সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণ হিসেবে দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের হালকা লক্ষণ ঠাণ্ডা বা ফ্লুর মতো শুরু হয়, তবে শুকনো কাশি দেখা দিলে সেটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। জরিপকৃতদের মধ্যে ৮০% শুকনো কাশির উপস্থিতি তাদের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে রেকর্ড করেছেন।
জ্বর:
করোনাভাইরাস রোগীদের মধ্যে প্রচলিত দ্বিতীয় সাধারণ লক্ষণ হল জ্বর। সম্ভবত প্রদাহের ফলে এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ২-১৪ দিন পরে এটি দেখা দিতে পারে। জ্বর অনেকরকম সংক্রমণের কারণে হতে পরে, তাই তিনদিনের বেশি জ্বরে ভুগলে এবং তা যদি ১০০ ডিগ্রির বেশি হয় তবে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
শ্বাসকষ্ট:
শ্বাসকষ্ট বা অস্থিরতা বোধ করা সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের রেকর্ড করা তৃতীয় সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ ছিল। তবে, গবেষণা অনুসারে সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে লক্ষণটি বেশি দেখা গিয়েছিল।
করোনাভাইরাস যেহেতু ওপরের শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্ট আক্রমণ করে, এটি বেশিরভাগ সময় শ্বাসনালীকে অবরুদ্ধ করে তোলে যা শ্বাসকষ্টের দিকে নিয়ে যায়। এই লক্ষণ দেখা দিলে কখনোই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।
গবেষণার অন্যান্য অনুসন্ধান
সিডিসির সমীক্ষায় এগুলো ছাড়াও করোনা সংক্রমণের আরও কিছু লক্ষণ উঠে এসেছে। পেশী ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, মাথাব্যথা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন পেটে ব্যথা এবং বমি বমি ভাব দেখা যায়। চিকিৎসা করায়নি বা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি এমন অনেকে জানিয়েছেন তারা গন্ধ বা স্বাদের অনুভূতি হারিয়েছিলেন।
যদিও এটি একটি নমুনা গবেষণা। তবে এর ফলাফল কোয়ারেন্টাইন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে সংক্রমণ কমিয়ে আনা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২০
নিউজ ডেস্ক