কক্সবাজার: কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে নবজাতকদের চিকিৎসাসেবায় ব্যক্তি উদ্যোগে যুক্ত হলো ‘কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার (সিপিএপি) মেশিন। হাসপাতালটির চতুর্থ তলায় নবজাতক ওয়ার্ডে মূলত শূন্য থেকে ২৮ দিন বয়সী নবজাতকদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, কম ওজন নিয়ে ও সময়ের আগে জন্ম নেওয়া।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতকরা নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা বর্তমানে হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে আছে। কিন্তু যেসব শিশুর শুধু মাত্র অক্সিজেন দিয়ে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় না তাদের সিপিএপি’র মেশিনের মাধ্যমে অতিরিক্ত চাপে অক্সিজেন সরবরাহ দরকার হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সদর হাসপাতালে নবজাতক ওয়ার্ডে এ মেশিনটি ছিল না। যে কারণে ক্রিটিক্যাল নবজাতকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করতে হতো চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। কিন্তু যোগাযোগ দূরত্বের কারণে অনেক শিশুর পথেই মৃত্যু হয়। অবশেষে কয়েকজন দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় শিশুদের চিকিৎসাসেবার সেই অভাব এখন দূর হয়েছে। গত সোমবার (৩১ আগস্ট) থেকে নবজাতক ওয়ার্ডে চালু হয়েছে সিপিএপি মেশিন।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের ইনচার্জ সহকারী অধ্যাপক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম এস জামান বাংলানিউজকে বলেন, গত সোমবার (৩১ আগস্ট) মাত্র ৩৪ সপ্তাহ বা আট মাস গর্ভে থাকার পর এক শিশুর জন্ম হয়েছে। শিশুটির ওজন মাত্র এক হাজার ৮০০ গ্রাম। তার নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট আছে। যে কারণে শিশুটিকে সিপিএপি মেশিনের মাধ্যমে অতিরিক্ত চাপে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। রামুর চা-বাগান এলাকার সোহেল রানা ও রিপা দম্পতির নবজাতক এ উদ্যোগের প্রথম সেবা গ্রহণকারী।
তিনি বলেন, এতদিন হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে সিপিএপি মেশিনটি ছিল না। কিন্তু দেখা যেত প্রতিদিনই পাঁচ-ছয় জন ক্রিটিক্যাল নবজাতক রোগী ওয়ার্ডে আসতো। ফলে বাধ্য হয়ে বাইরে রেফার্ড করতে গিয়ে অনেক শিশু পথেই মারা যেতো। কিন্তু কয়েকজন দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় আমাদের সেই সংকট কিছুটা হলেও দূর হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৫০ হলেও প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন আবার কোনো কোনো দিন ৭০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হয়। তাই চাহিদা অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করতে জেলায় এরকম আরও চার-পাঁচটি সিপিএপি মেশিন দরকার।
এ মহৎ উদ্যোগে সহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিকিৎসক জামান বলেন, আমরা যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করলে অনেক অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। এটি তার যথাযত প্রমাণ। বর্তমানে নবজাতক ওয়ার্ডে গড় মৃত্যুর হার শতকরা ১২ শতাংশ। আমাদের টার্গেট মৃত্যুহার ১০ শতাংশর নিচে রাখা (যোগ করেন তিনি)।
এ মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে যুক্ত ছিলেন কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. আব্দুল মজিদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকার একটি চিকিৎসাসামগ্রীর জন্য অনেক শিশু মারা যাচ্ছে। এ সমস্যাটি অনুধাবন করতে পেরে ডা. এম এস জামান স্যার এ সংকট দূর করার উদ্যোগ নেন। তিনি এ বিষয়ে সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা কামনা করেন। আমার সৌভাগ্য এ রকম একটি মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্যার আমাকেও যুক্ত করেন।
ডা. মজিদ বলেন, আমি ও স্যার ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরের চিকিৎসকসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। অনেকেই আমাদের আহ্বানে সাড়া দেন। মাত্র দেড়মাসেই আমরা চার লাখ টাকা সহায়তা পাই। এমনকি যাদের কাছ থেকে মেশিনটি কেনা হয়েছে তারাও ৫০ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছে। সবার সহযোগিতায় এখন অনেক শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে।
‘কক্সবাজারের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ’ যোগ করেন ডা. মজিদ।
প্রসঙ্গত, নবজাতকের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে জাতি সংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চারতলায় নবজাতক ওয়ার্ডের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে সংস্থটির সহযোগিতায় চারজন মেডিক্যাল অফিসার কর্মরত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২০
এসবি/আরআইএস