ঢাকা: রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে ব্যবসায়ী এস এম শরিফুল হাসানের। রিপোর্ট পাওয়ার পর পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শে আইসিডিডিআরবি-তে নমুনা পরীক্ষা করতে দিলে পরের দিন সেই রিপোর্ট আসে নেগেটিভ।
ল্যাবএইডের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন নেত্রকোনা থেকে আগত ওই ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছিলেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। সবশেষ গত ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসেন তিনি।
বাংলানিউজকে শরিফুল হাসান বলেন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (এনেসথেসিয়া) ডা. লুৎফর কবীরের পরামর্শে এমআরআই করিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শহীদুল আলমের সঙ্গে দেখা করি। তিনি রিপোর্ট দেখে বলেছেন মেরুদণ্ডে টিউমার হয়েছে। টিউমারের সাইজও বড় হয়ে গেছে। দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। চিকিৎসক বলেছেন, দ্রুত অপারেশন না করলে যেকোনো সময় বাম পা প্যারালাইসড হয়ে যেতে পারে। এমনকি পায়খানা ও প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমিও সিদ্ধান্ত নেই অপারেশন করার। দুই চিকিৎসকের পরামর্শে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১৭ সেপ্টেম্বর অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, অপারেশনের জন্য রুটিন মাফিক বেশ কিছু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রক্তের অনেকগুলো টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, কোভিড-১৯ টেস্ট, বুকের এক্সরে-সহ বেশ কিছু পরীক্ষা করতে ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর সবগুলো পরীক্ষার নমুনা দিয়ে আসি। ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে রিপোর্ট পাই করোনা পজিটিভ। চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত কথা বলি। যেহেতু আমার কোভিড-১৯ এর কোন লক্ষণ ছিল না। চিকিৎসকের সহযোগিতায় আইসিডিডিআরবিতে ওই দিন বিকেলে আবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে দেই।
শরিফুল হাসান আরো বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পারিবারের সদস্যরাও দুশ্চিন্তায় পড়ে। আমি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বোনের বাসায় উঠেছি। ১৬ সেপ্টেম্বর আইসিডিডিআরবির রিপোর্ট নেগেটিভ এলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বস্তি আসে। তবুও অস্বস্তিতে আছি। অপারেশনের জন্য আরও কত দিন অপেক্ষা করতে হয়! এই কারণে আমার সময়, টাকা ও কষ্ট বেড়েছে।
এস এম শরিফুল হাসানের পারিবারিক চিকিৎসক জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (এনেসথেসিয়া) ডা. লুৎফর কবীর বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো আরটি-পিসিআর মেশিন ১০০ ভাগ নির্ভুল সেটা বলা যাবে না। ভুল হতেই পারে। রোগী যেহেতু দুই জায়গায় টেস্ট করিয়েছে, করোনার উপসর্গ কিছুই নেই তাই দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করায় আইসিডিডিআরবির রিপোর্ট সঠিক বিবেচনা করা যায়। এরকম ক্ষেত্রে ল্যাবএইড হাসপাতালের আরও সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। এই প্রতিষ্ঠানের এ রকম অভিযোগ আরো আছে।
তিনি বলেন, এতে (ভুল রিপোর্ট) শরিফুল হাসানের তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। কারণ, রোগী বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করছেন।
রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, এ রকম ঘটনা খুবই সাধারণ ঘটনা। নমুনায় যদি ভাইরাস থাকে তাহলে অবশ্যই পজেটিভ আসবে। যদি ভাইরাস না থাকে তাহলে নেগেটিভ হবে। আরটি-পিসিআর মেশিনে শতকরা ৩০ শতাংশ ফলস নেগেটিভের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ফলস পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ল্যাবএইড ও আইসিডিডিআরবি দুই প্রতিষ্ঠানই ভালো। তাদের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
পিএস/এমজেএফ