ঢাকা: এইডস আক্রান্ত জনগোষ্ঠী নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে কুসংস্কার, ভ্রান্তধারণা ও বৈষম্য আছে তা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে এইচআইভি এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের জীবন যাপন ভালো না। তাদের জীবন যাপন ইসলামিক না। এ জন্য তাদের এইডস হয়েছে। তাদের প্রথমে আঙুল তুলে দেখানো হয়, সে পাপাচার ও পাপি। এ জন্য কুসংস্কার, ভ্রান্তধারণা ও বৈষম্য দূর করতে পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ইসলামিক প্রোগ্রামগুলোতে এইচআইভি এইডস ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এইচআইভি এইডস ভাইরাসের অবস্থা পরিসংখ্যানগতভাবে অনেক ভালো। তবে এটা যে কোন সময় খারাপ পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে। তবে এটা প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে মিডিয়ার অনেক ভূমিকা আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) ও লাইন ডাইরেক্টর টিবি-এল ও এএসপি অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, আট দশটা ক্রনিক ডিজিজেসের মতো একটা রোগ। এ রোগ একেবারে সেরে যাবে না। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তবে আজকে আক্রান্ত হলে কালকেই যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে সেটা নয়। কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যে কোনো ইনফেকশনেই মৃত্যু হতে পারে। আমরা যে কাজটা করি, ওষুধ দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার মো. আক্তারুজ্জামান ২০১৯ সালের সর্বশেষ তথ্য উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৮ মিলিয়ন। এর মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ মিলিয়ন। দেশে বর্তমানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র সাত হাজার ৩৭৪ জন। এখনও শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছে প্রায় ৭ হাজার। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আছে ১০৫ জন। দেশে এ রোগে গত বছর মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২৪২ জনের। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ৫৭২ জন, চট্টগ্রামে দুই হাজার আট জন, সিলেট বিভাগে এক হাজার ১৯ জন রয়েছেন।
অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, সারাদেশে ২৮টি এইচটি সেন্টার আছে। জিন এক্সপার্ট মেশিন এইচআইভি ভাইরাস শনাক্তে কাজ করা হচ্ছে। যেহেতু এ মেশিনটি ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, তাই দ্রত সময়ে বাকিদের শনাক্তের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) ও লাইন ডাইরেক্টর টিবি-এল ও এএসপি অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলামের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন নাট্যকার মামুনুর রশিদ, আজাদ আবুল কালামসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
পিএস/এমজেএফ