ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যশোরে কিশোরী বধূর পেটে ‘বিরল টিউমার’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
যশোরে কিশোরী বধূর পেটে ‘বিরল টিউমার’

যশোর: যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে এক কিশোরীর পেট থেকে বিরল একটি টিউমার বের করা হয়েছে। এরপর টিউমারটি কেটে হতভম্ব হয়ে যান অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবীরা।

 

টিউমারটির মধ্যে মাংসপিণ্ড, মাথা, চুল, দাঁত, হাত-পায়ের আঙুল ও বড় বড় নখ ছিল। মেডিক্যাল সায়েন্সের পরিভাষায় এ ধরনের টিউমারকে বলা হয় ‘টেরোটমা’। জটিল এ অপারেশনের নেতৃত্বদানকারী সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এনকে আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।  

অস্ত্রোপচারে তাকে সহযোগিতা করেন অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু হাসনাত মো. আহসান হাবিব ও সহকারী অধ্যাপক ডা. আনিছুর রহমান।

অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়া চিকিৎসকরা বলেন, তাদের পেশায় প্রথমবারের মতো বিরল এ টিউমার (টেরোটমা) অস্ত্রোপচার করলেন।

ওই কিশোরীর স্বজনরা বাংলানিউজকে জানান, ছয় মাস আগে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের ওই কিশোরীর সঙ্গে একই ইউনিয়নের এক যুবকের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ওই কিশোরীর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। বিয়ের পর থেকেই পেটে ব্যথায় ভুগতে থাকে সে। স্বামীর বাড়ির লোকজন পল্লী চিকিৎসক দেখালে তারা জানান, অল্প বয়সে বিয়ে হলে পেটে এমন ব্যথা হতে পারে। এক মাস আগে থেকে ওই কিশোরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন তার পরিবার মেয়েকে নিজেদের বাড়িতে আনেন চিকিৎসা করাতে। প্রথমে তারা যশোর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক দেখান। ওই ক্লিনিক থেকে জানানো হয়, কিশোরীর পেটে টিউমার রয়েছে। এ চিকিৎসা যশোরে হবে না। পরে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। কিন্তু টাকার অভাবে বেশিদিন ঢাকায় চিকিৎসা করাতে পারেননি। তাকে বাড়িতে ফেরত আনেন। ৩ মার্চ পেটের ব্যথায় ছটফট করতে থাকলে তাকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেও জানানো হয়, ওই রোগীকে ঢাকায় নিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। রোগীর পরিবারের লোকজন জানান, তাদের ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার করানোর সামর্থ্য নেই। এরপর থেকে ওই কিশোরী সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এনকে আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিল।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ওই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণ করা হয়। পরে টিউমারটি কেটে তাতে নবজাতক আকৃতির মাংসপিণ্ড, মাথা, চুল, দাঁত, হাত-পায়ের আঙুল ও বড় বড় নখ পাওয়া যায়।

মুহূর্তে হাসপাতাল চত্বরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এক কিশোরীর পেটে ‘রাক্ষস’ হয়েছে। এমন গুজবে নবজাতক সদৃশ্য টিউমার দেখতে হাসপাতালে অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনরা ভিড় জমান।

সার্জারি বিভাগের ডা. এনকে আলম বাংলানিউজকে বলেন, এটি একটি বিরল টিউমার। যা যশোরে প্রথম শনাক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে এ অস্ত্রোপচারটি ছিল জটিল। লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় যশোরে এমন অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয় না। এমন অস্ত্রোপচার যশোরে প্রথম ও চিকিৎসক জীবনে আমাদের এমন অভিজ্ঞতাও এটাই প্রথম। নবজাতকের মতো দেখতে হলেও এটি তা নয়। বর্তমানে রোগী সুস্থ আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
ইউজি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।