ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে শেবাচিমের রোগীর স্বজনদের অপেক্ষা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে শেবাচিমের রোগীর স্বজনদের অপেক্ষা

বরিশাল: মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকেই গোটা বরিশালে প্রতিদিন সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা গড়ে ৫ শতাধিক থাকছে। একইসঙ্গে এ অঞ্চলের একটি করোনা ডেটিকেটেড খ্যাত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে উপসর্গ ও করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গত কিছু দিন ধরে আড়াইশতের নিচে নামছে না।

এমন অবস্থায় জনবল ও সেবা সামগ্রীর সংকট নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। তারপরও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শতভাগ চিকিৎসাসেবা দিতে।

এরইমধ্যে চলতি বছরের ১৭ জুলাই বিকেলে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বাসিন্দা মনিরুজ্জামানের (৪০) মৃত্যুর পরপরই শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে হামলা চালায় তার স্বজনরা। পাশাপাশি সেখানে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে অশোভন আচরণও করেন তারা। যদিও পরবর্তীতে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পায় রোগীর স্বজনরা। কিন্তু মৃতের ভাই হাফিজুর রহমান অভিযোগ করেছিলেন রোগীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবারহ না থাকা এবং হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সঠিকভাবে কাজ না করায় রোগী মৃত্যু হয়েছে। যদিও বিষয়টি পরবর্তীতে তেমন একটা আলোচনায় আসেনি।

তবে, ওই হাসপাতালে ভর্তি করোনায় আক্রান্ত এক নারী রোগীর স্বজন আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার (১৯ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কিছু ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন ‘বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের নিতে রোগীর স্বজনদের অপেক্ষা, নিজের চোখে না দেখলে আসলে বাস্তবতাটাই বুঝতে পারতাম না, আল্লাহ তুমি সবাইকে হেফাজত করো, আমিন’। আর তার পোস্টের লেখার সঙ্গে দেওয়া ছবিগুলোতে দেখা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মূল ফটকের সামনে একটি পিকআপের মধ্যে বেশ কিছু অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। আর তার কিছু দূরত্বে লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন। যাদের কারো হাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনে ব্যবহৃত ট্রলিও রয়েছে।

আর তার এই পোস্টের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মূল ফটকের সামনে এ ধরনের ঘটনা সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পিকআপভ্যানে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার রি-ফিল বা পুনরায় পরিপূর্ণ করে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মূল ফটকের সামনে এলেই, সেখানে তড়িঘড়ি করে গিয়ে হাজির হন অক্সিজেনের প্রয়োজন এমন রোগীর স্বজনরা। সিলিন্ডার পিকআপভ্যান থেকে নামতে দেরি হলেও, স্বজনরা তা বহন করে রোগীর কাছে নিতে দেরি করেন না।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, চাহিদা অনুযায়ী সিলিন্ডার সব সময় পাচ্ছেন না তারা, আবার অনেক সময় সিলিন্ডারগুলো রি-ফিল হয়ে আসতেও বিলম্ব হয়। আর আসার পরে সেগুলো ওপরে উঠিয়ে রোগীর কাছে পৌঁছাতে দায়িত্বে থাকা ২/১ জন স্টাফকে প্রচুর শ্রম ও সময় দিতে হয়, তাই স্বজনরাই তাদের রোগীর জন্য সিলিন্ডার এভাবে নিচ থেকে ওপরে নিয়ে যান।

যদিও সম্প্রতি করোনা ওয়ার্ডের অষ্টম জাতীয় রোস্টার শেষ করা ডা. সানজিদা শহীদ বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত হাসপাতালের রোগীর পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের সংকট মনে হয়নি কখনো। তবে, অক্সিজেনর ব্যবহার কিংবা কীভাবে কি করতে হয়, সেটা অধিকাংশ রোগী ও তাদের স্বজনরা জানেন না। অনেকে যতটুকু দরকার তার থেকে বেশি দিয়ে ফেলছে, আবার অনেক রোগী মুখে দিচ্ছে না কিন্তু, সিলিন্ডার চলছে, অক্সিজেন বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আবার অনেক রোগীর এই মুহূর্তে অক্সিজেন লাগছে না, কিন্তু সে একটা প্যানিক অবস্থা নিয়ে সিলিন্ডার পাশে ধরে রেখেছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের মাথার মধ্যে গেঁথে গেছে, তার অবস্থা যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। সংকট রয়েছে সিলিন্ডারের। তাই হাসপাতালের জন্য তিনি আরও অক্সিজেন সিলিন্ডার চেয়েছেন, যেগুলো চলে এলে আর সমস্যা থাকবে না ৩শ বেডের এই করোনা ইউনিটে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।