ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বেড়েছে ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
বেড়েছে ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য!

রাজশাহী: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দালাল ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য আবারও চরম আকার ধারণ করেছে।  

এতে যেমন ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম তেমনি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনদের।

হাসপাতালের অভ্যন্তরে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় করোনা মহামারির মধ্যেও বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে আইসিইউ ভবনসহ সব জায়গাতেই তারা বিচরণ করছেন। হাসপাতালের ভেতরে এমন অনিয়ম ও হয়রানি যেন বন্ধ হওয়ার নয়। তবে মহামারির মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি ও দালাল নিয়ন্ত্রণে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বুধবার দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই নির্দিষ্ট সময় চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রায় প্রতিদিনিই হরহামেশা চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করছেন তারা। মাঝেমধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন চিকিৎসকের চেম্বারের সামনেও তাদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এছাড়া অনেক চিকিৎসক দীর্ঘসময় তাদের সঙ্গে আড্ডা ও খোঁশগল্পও করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আনসার থেকে শুরু করে সবারই এক ধরনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অনেক চিকিৎসকও চায় প্রতিনিধিরা আসুক। এতে পরিচালকের গ্রহণ করা কোনো পদক্ষেপেই তাদের দৌরাত্ম্য কমছে না। তারা অধিকাংশই শিক্ষিত তাই বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে হাসপাতালে প্রবেশ করেন।

রোগীর স্বজনদের অভিযাগ, এখন হাসপাতালে দালালের উৎপাত কমলেও বেড়েছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য। চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় চেম্বারের ভেতরে তাদের দেখা যায়। আবার চেম্বারের বাইরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ১০-১২ জন একসঙ্গে দলবেঁধে থাকেন। রোগীরা চেম্বার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ছবি না তুলতে দিলেই বাঁধে বিপত্তি। গালিগালাজসহ বিভিন্ন বাজে মন্তব্যও করেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজ হাসপাতলে রোগীর চাপ আগের চেয়ে কিছুটা বেশি। অন্যান্য দিন বহির্বিভাগের বাইরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অধিকাংশের উপস্থিতি থাকলেও এদিন বাইরে হাতেগোনা কয়েকজন ছিলো। বাইরে থেকে দেখে হাসপাতালকে দালালমুক্ত ও ওষুধ প্রতিনিধির দৌরাত্ম্যমুক্ত মনে হচ্ছিল। কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসকের চেম্বারের বাইরে তাদরে অবস্থান করতে দেখা যায়। তারা নিজেদের কোম্পানির কার্ড ঝুঁলিয়েই হাসপাতালের ভেতরে ঘোরাফিরা করছেন। কিন্তু হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা তাদের কোন জিজ্ঞাসাবাদ বা নিষেধ করছেন না।

এদিন বহির্বিভাগের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে সবচেয়ে বেশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেখা যায়। তারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তারা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছিলেন। চেম্বারের বাইরে রোগীদের অপেক্ষায় থাকার জন্য বসার জায়গার বেশিরভাগ স্থান তারা দখলে নিয়েছেন।

মোহনপুর থেকে খালার চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন রহিম ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোথাও বসার জায়গা না পেয়ে অসুস্থ খালার জন্য শুধু একটি চেয়ার ম্যানেজ করেছি। নিজে তিন ঘণ্টারও বেশি দাঁড়িয়ে আছি। এর মধ্যে প্রতিনিধিরা সকাল থেকেই রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি উঠাতে আসছেন। প্রায় ৩ থেকে ৪ বার টিকিটের ছবি নিয়েছেন। একজন এসে ভালো ছাড়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে বলেও জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, হাসপাতালের ভেতরে দালাল, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিসহ সব ধরনের হয়রানি ও দৌরাত্ম্য দূর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেকেই চায় তারা আসুক। তারা বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে ও কৌশলে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কখনোই এদের প্রশ্রয় দেবে না। তাদের জন্য যে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে সেসময় শুধু আসতে পারবেন তারা। কিন্তু বিভিন্ন সময় তাদের বারবার অপমান করার পরও আসছেন।

তিনি আরও বলেন, এখন হাসপাতালের সীমানা দেওয়াল নির্মাণ চলমান থাকায় তারা বিভিন্নভাবে ভেতরে প্রবেশ করছে। কিন্তু কাজ শেষ হলে তাদের প্রবেশ ঠেকাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। যাতে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে তারা হাসাপাতালে ঢুকতে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।