কেরানীগঞ্জ(ঢাকা): দুই যুগ আগেও অবহেলিত এক জনপদ ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জ। বিশেষ করে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আবাসস্থল পশ্চিম কেরানীগঞ্জ ছিল উন্নয়ন বঞ্চিত একটি পল্লী এলাকা।
স্বপ্নের শহর রাজধানী ঢাকার অংশ হয়েও ছিল বাতির নিচে অন্ধকার। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি নির্ভরশীল হওয়ায় অভাব অনাটনেই কাটতো তাদের জীবন-সংসার। দিনে তিন বেলা খাবার যাদের বিলাসিতা, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা সেখানে ছিল স্বপ্ন!
আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়ন ও তার আশেপাশের এলাকার সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে আশির দশকের মাঝামাঝি এলাকার কৃতি সন্তান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্রি. জেনারেল ডা. হেদায়েত নিজ গ্রাম তালেপুরে স্থাপন করেন একটি দাতব্য চিকিৎসালয়।
যেখানে চোখের অপারেশন, লাইগেশন থেকে শুরু করে ছোট ও মাঝারি অপারেশন, বিভিন্ন টিকা এমনকি ওষুধও বিনামূল্যে দেওয়া হতো। পরে এটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিণত হলে বাড়ে এর কার্যপরিধি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সেবা গ্রহীতাদের ভিড়ও। একসময় তালেপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি হয়ে ওঠে এ এলাকার গরীব, অসহায় আর মধ্যবিত্ত মানুষের ভরসার স্থল।
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুটি ভাবনের একটি চিকিৎসা সেবা, অন্যটি ডাক্তার ও কর্মচারীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন যাবৎ। তবে বর্তমানে জনগুরুত্বপূর্ণ এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি যেন নিজেই রোগী। বছরের অধিকাংশ সময় হাসপাতালের আঙিনা ও মাঠে পানি জমে থাকে কোমর থেকে হাঁটু সমান। পচা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানি যেন এখন মশা উৎপাদনের কারখানা। এক সময়কার আশার আলো এই চিকিৎসালয়টি এখন স্থানীয়দের দুর্ভোগের কারণ।
স্থানীয় যুবক ইমতিয়াজ শুভ জানান, কলাতিয়া ইউনিয়নের তালেপুর, জৈনপুর, ছাতির চড়, খাড়াকান্দি, নতুন চড় খাড়াকান্দি, বেলনা কুঠিবাড়ি, খাসকান্দি, ঋষিবাড়িসহ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ রয়েছে যারা অর্থের অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন না। তাই তালেপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সংস্কার করে জনবল নিয়োগ দিলে এ এলাকার বঞ্চিত মানুষগুলোর উপকার হতো।
নিরঞ্জন ঘোষ নামে এক ভুক্তভোগী জানান, এক সময় হাসপাতালটি খুবই জমজমাট ছিল। প্রচুর রোগী আসতো হাসপাতালে। আমরা হাসপাতালের মাঠে দিনে ক্রিকেট, ফুটবল, আর রাতে ব্যাডমিন্টন খেলেছি। কিন্তু এখন বছরের অধিকাংশ সময়ই হাসপাতালের মাঠটি পানির নিচে থাকে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিচু জায়গায় হওয়ায় চারপাশের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পানি এখানে জমা হয়। অনেক সময় বিল্ডিংয়েও পানি উঠে যায়। হাসপাতালের মাঠ এখন যেন মশা উৎপাদনের কারখানা।
স্থানীয় যুবক মিয়া রফিক মোহাম্মদ বলেন, তালেপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক সময় চোখের অপারেশন, লাইগেশনসহ ছোট ও মাঝারি আকারের অস্ত্রপচার হতো। সব ধরনের ওষুধ পাওয়া যেত। কিন্তু এখম হিস্টাসিন, ওমিপ্রাজলের মত ওষুধও পাওয়া যায় না।
সরকারের সুদৃষ্টির অভাবে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। এলাকার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যা পাওয়া যায়, এখানেও আমরা তাই চাই।
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট অজিত কুমার দাস বলেন, ৬ বছর ধরে আবাসন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ভাড়া বাসায় থাকছি। বিল্ডিংয়ের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, নিচেও পানি জমে থাকে। হাসপাতালের আঙিনা ছয় মাসই থাকে পানির নিচে। হাসপাতালে থাকতে না পারায় চুরিও হয়ে যাচ্ছে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র। চারপাশে উঁচু বাড়ি-ঘর হওয়ায় হাসপাতালটি এলাকার ডোবায় পরিণত হয়েছে। সব পানি এখানে এসে জমে মশা উৎপাদন করছে, যা এলাকাবাসীকেও মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান জানান, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিচু জায়গায় হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ই পানি জমে থাকে, তাই স্বাস্থ্য সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানটি পরিদর্শন করে গেছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এখানে মাটি ভরাট করা হবে। যেহেতু জলাবদ্ধতাই এখানে প্রধান সমস্যা, আশা করি এর দূর হলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২১
এমএমজেড