ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রাজাপুরের এক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলছে অনিয়মের রাজত্ব!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
রাজাপুরের এক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলছে অনিয়মের রাজত্ব!

ঝালকাঠি: রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে চলছে অনিয়মের রাজত্ব। সেখানে মানা হচ্ছে না সরকারি কোনো নীতিমালা, অফিস সময়ে তোলা হচ্ছে না জাতীয় পতাকা।

কর্মচারীরা অফিস করছেন নিজেদের ইচ্ছামতো।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সরকার ঘোষিত নীতিমালা ও নিয়মকানুন কোনোটাই মানা হয় না। কর্মরতরা নিজেদের ইচ্ছায় অফিসে আসা-যাওয়া করেন। বেলা একটার পর আর কাউকে পাওয়া যায় না।  

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করলেও সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) বুধবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে অফিসে আসেন। ওই কেন্দ্রেই তার বাস করার কথা থাকলেও তিনি রাজাপুর উপজেলা শহরের মেডিক্যাল মোড়ে বাসা ভাড়া করে থাকেন।  

ফ্যামিলি কল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) শামসুন্নাহার প্রতি সোম ও বুধবার অতিরিক্ত দায়িত্বে এ কেন্দ্রে সংযুক্ত থাকলেও তিনি সপ্তাহের এ দুদিনও কেন্দ্রে আসেন না। মাসে ২/৩ দিন উপস্থিত হয়ে বাকি সময়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি অফিসে উপস্থিত হন। তিনি দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করেন না বলে ওই এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন।  

বুধবার সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কর্তব্যরত আয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। কিন্তু কেন্দ্র ভবনে ওড়ানো হয়নি জাতীয় পতাকা। ৯টা ৬মিনিটে স্যাকমো রমেন বড়ালকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি বাসা থেকে বের হইছি, আসতেছি। ৯টা ৪০মিনিটে তিনি মোটরসাইকেল যোগে কেন্দ্রে উপস্থিত হন। এ সময় তার মোটরসাইকেলে সঙ্গী ছিলেন মাসুদুর রহমান। স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিন হোসেনও কিছুক্ষণের মধ্যে কেন্দ্রে উপস্থিত হন।  

স্যাকমো ডা. রমেন বড়ালের কাছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জুলাই মাসের মাসিক প্রতিবেদন দেখান। আগস্ট মাসের সেবার রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।  

এরইমধ্যে এফডব্লিউভি শামসুন্নাহার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এসময় তিনি বলেন, কি হইছে এখানে, আমি বাইরে অনেক জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে কেন? আমরা আমাদের মতো কাজ করবো, তাও পারছি না। আমাদের কাজে ডিস্টার্ব করা হচ্ছে।  

জুলাইয়ের মাসিক প্রতিবেদন থেকে তথ্য দিতে শুরু করলে তিনি পুনরায় স্যাকমোর কক্ষে ঢুকে তাকে ধাক্কা দিয়ে রিপোর্টের কপি টেনে নিয়ে বলেন, আপনি কার অনুমতি নিয়ে তথ্য দিচ্ছেন, চাইলেই যে কাউকে তথ্য দেওয়া যাবে না। মাসের শুরুতে তথ্য চাইবে, আবার শেষের তথ্য চাইবে, আমাদের বিরক্ত করবে। পারলে অফিস ঠিকমতো চালাবেন, নইলে দরকার নেই।  

এ কথা বলেই তিনি প্রতিবেদনের কপি নিয়ে চলে যান।  

স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিন হোসেন বলেন, এখানে কোনো কিছুরই নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই। যে যেমন পারছেন অফিস করছেন।  

স্কুলছাত্র রাফি মৃধা জানায়, ১১টার দিকে অফিসে আসেন আবার কিছুক্ষণ পরে চলে যান। আমরা অনেক সময় স্কুলে যেতে পথে এ কেন্দ্রে ঢুকে ওষুধ চাইলে লোক না থাকায় আয়া আমাদের দিতে পারেন না।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনায়েত হোসেন মৃধা জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের লোকজন মাঝে মধ্যে আসেন আবার নিজেদের ইচ্ছায় চলে যান। রোগী কে এলো, কে গেলো এসব বিষয়ে তাদের কোনো গুরুত্ব নেই। রোগী এলে অনেক সময় বসিয়ে রেখে কাউকে ওষুধ দেওয়া হয় আবার কাউকে ওষুধ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।  

স্থানীয় শাহীন মৃধা জানান, ৩টা পর্যন্ত অফিস টাইম থাকলেও ১টার পরে আর কাউকে এখানে পাওয়া যায় না। সামনের বাজারে প্রায় ১৫টি দোকান আছে। তারা কেউই কেন্দ্রের লোকজনকে ভালো জানেন না। একদিকে যেমন স্বেচ্ছাচারিতা অপরদিকে তেমন খারাপ আচরণ। এজন্য রোগীর সংখ্যাও খুব কম।  

ওই কেন্দ্রের পরিদর্শক উজ্জ্বল তালুকদার জানান, আমি মাঠ কর্মীদের তদারকির দায়িত্ব পালন করি। স্যাকমো ওখানে না থেকে তিনি রাজাপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তার কাজেও মন্থর গতি। জনগণের স্বাস্থ্য সেবার মূল ব্যক্তিই হলেন স্যাকমো। সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ায় স্থানীয় জনগণও এখন আর তেমন আসেন না।

স্যাকমো রমেন বড়াল বলেন, সকাল ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা নতুন অফিস সময় আমি জানি না। আমি ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে তারপরে অফিসে আসতে চাইছিলাম, আপনি ফোন করায় তাড়াতাড়ি আসছি।

ইউপি চেয়ারম্যান তো ১১টার আগে পরিষদে উপস্থিত হন না। তাহলে আপনি তার সঙ্গে কথা বলে কখন আসতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি যখন আসতেন তখনই তার সঙ্গে কথা শেষ করে আসতাম।  

জাতীয় পতাকা না তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় দিবসগুলোতে পতাকা ওড়ানো হয়। কিন্তু প্রতিদিন অফিস টাইমে পতাকা ওড়ানো হয় না।  

পতাকা এবং পতাকার স্ট্যান্ড দেখতে চাইলে পুনরায় তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন।  

এ বিষয়টি জানাতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শৌরেন্দ্রনাথ সাহার মোবাইল নম্বর পরিদর্শক উজ্জ্বল তালুকদারের কাছ থেকে নেওয়া হয়। ওই নম্বরে তিনবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুখ লাল বৌদ্ধ জানান, ওখানকার স্বাস্থ্য সেবার বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে স্যাকমো রমেন বড়ালকে শাস্তির পদায়ন দিতে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আমিও বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এখন শুধু তা বাস্তবায়নের বিষয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।