ঢাকা: বাংলাদেশে তিন কোটির বেশি মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি গবেষণায় জানা গেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক রোগে আক্রান্ত হলেও এখনো এ নিয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়ায় ঘাটতি রয়েছে।
দেশে মানসিক রোগী আস্তে আস্তে কমে এলেও এখনো এই রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। অথচ শুরুতে চিকিৎসা নেওয়া হলে আরও অনেক রোগের মতো মানসিক রোগ থেকেও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
সোমবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ইয়ুথ কমিউনিটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট সাইকোথেরাপিস্ট ডা. এ কে মো. খালেকুজ্জামান, প্রমিসেস মেডিকেল লি. এর পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, চিত্র নায়ক তানভীর রহমান তনু, ওয়াইসিবিডির সমন্বয়কারী এ কে এম আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, করোনা পরবর্তী একাডেমিক চাপের কারণে ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এই সংখ্যা সামগ্রিকভাবে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এসব মানসিক সমস্যার পেছনে আছে দীর্ঘ বিরতির ফলে তৈরি হওয়া সেশনজট, পরীক্ষার ফল নিয়ে হতাশা, লেখাপড়ায় অনীহা ও পড়া বুঝতে না পারার মতো কারণ।
সভায় জানাননো হয় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, কলেজশিক্ষার্থী ৮৪ জন, স্কুলশিক্ষার্থী ২১৯ জন এবং মাদরাসার ৪৪ জন। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ২৪২ জন এবং পুরুষ ১৬২ জন।
বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা এবং আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যে সমস্যাগুলো নিয়ে তারা ভুগতে থাকেন, তার অনেকগুলোই চাইলে সমাধান করা যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি, মন খুলে কথা বলার মতো সামাজিক পরিবেশ তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমেও তাদের এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।
তারা বলেন, ব্যক্তিগত হতাশার মতো নানা ব্যাপার শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তারা আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং এর প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে, অনেকক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধে নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নের কাজ সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ এ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ও তার শতভাগ প্রয়োগের উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২২
এইচএমএস/এমএমজেড