পাবনা: পাবনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক ড. উমা রায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অভিযোগ রয়েছে, অধীনস্থ নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উমা নানা সময় হুমকি দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিতেন। এমনকি তিনি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রোগ্রামের টাকা আত্মসাৎ ছাড়াও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাক্ষরিত একাধিক লিখিত অভিযোগে এ তথ্য জানা গেছে।
হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগটি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের পক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধিদফতরের প্রশাসন ও মিডওয়াইফারি বিভাগের সহকারী পরিচালক মীরা রানী দাসের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সরেজমিন তদন্ত করেছে। তারা অভিযুক্ত উমা রায়সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না।
তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যাও জানাতে রাজি হননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উমা রায় দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছিলেন। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রোগ্রামের টাকা আত্মসাৎ, অতিরিক্ত ও অসময়ে ডিউটি দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, এসিআর-ডিজিএনএম-এ টাকা জমা দেওয়ার নাম করে অর্থ আদায়, নার্সিং বিষয়ে ট্রেনিং করার নামে অর্থ আদায়, চেয়ার ও অরগানোগ্রাম কেনার নামে চাঁদা আদায় এবং বেসরকারি নার্সি ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টার্ন করতে আসা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়সহ ২৩টিরও বেশি অভিযোগ উল্লেখ্য করা হয়েছে এসব অভিযোগপত্রে।
অভিযোগকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, উমার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। আমরা বিভিন্ন সময় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও সিভিল সার্জনের কাছে একাধিকবার মৌখিক অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। এজন্য তিনি কারো তোয়াক্কা করেন না। তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি জোর করে তার ব্যক্তিগত কাজেও আমাদের ব্যবহার করে থাকেন। অতিষ্ঠ ও বাধ্য হয়েই আমরা উচ্চ মহলে অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উমা রায় বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে আমি আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের জবাব দিয়েছি। আমার চাকরির আর মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে। এ মুহূর্তে আমি এসব বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।
এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, অভিযোগগুলো আমার আগের সহকারী পরিচালকের সময়ে করা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তাই কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বরত সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, এটি নার্সিং অধিদফতরের ডিজি পর্যায় থেকে তদন্ত হচ্ছে। তবে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। তবে এ প্রতিবেদন পাবনায় নয়, নাসিং অধিদফতরে জমা দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২২
এসআই