ঢাকা: ভারী ব্যাগ বহনের কারণে শিশুরা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে বলে ‘বিশ্ব স্পাইন দিবস-২০২২’ এর বৈজ্ঞানিক সেমিনার থেকে বক্তারা জানিয়েছেন।
‘মেরুদণ্ড আপনার অমূল্য সম্পদ, মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখতে হবে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব স্পাইন দিবস-২০২২ পালন করা হয়েছে।
রোববার (১৬ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ নিউরো স্পাইন সোসাইটি একটি শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিধ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বিগত দিনের তুলনায় স্পাইন রোগের চিকিৎসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় অনেক দূর এগিয়েছে। বর্তমানে কমসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়েছে। বর্তমান সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মেরুদণ্ডের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে কাজ করে চলেছে।
সেমিনার থেকে জানানো হয়, বিশ্বের ৫৪ কোটি মানুষের মেরুদণ্ডের সমস্যা ভুগছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের এ সমস্যা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ২০ হাজার এ ধরনের রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। বাংলাদেশের এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ২১২ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেক সময় গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ও আঘাতজনিত সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অন্য রোগীদের ইনজেকশন, ওষুধ ও থেরাপি জাতীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত ৪০ হাজার রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এদের অধিকাংশই থেকে যান চিকিৎসার বাইরে। তা ছাড়া ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা ব্যয় বহনে অসমর্থ্য।
শিশুদের জন্য স্কুলে ব্যবহৃত বেঞ্চ বা চেয়ারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ ছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভারী স্কুলব্যাগ বহন করে। দীর্ঘসময় ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেকের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়, পিঠে-ঘাড়ে চাপ পড়ে। অল্প বয়স থেকেই তারা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে। পরে এরা ৪০-৫০ বছরে পৌঁছলে অনেকেই মেরুদণ্ডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। আবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য শ্রেণিকক্ষে বসার ব্যবস্থা থাকে না। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাদেরও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সেমিনারে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে উন্নতমানের নিউরো স্পাইনের সব ধরনের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোকে বিশ্বমানের করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাংলাদেশে নিউরো সার্জারি এমএস কোর্স চালু করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউরো স্পাইন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. কামাল উদ্দিন। সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম।
এ সময় ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্র্জী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যানের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজাল হোসেন, বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. ধীমান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, হেপাটোলিবিলিয়ারি অ্যান্ড প্যানক্রিয়াটিক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মহছেন চৌধুরী, অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ্, রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত, হৃদরোগ বিভাগরে সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো, নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কেএম তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনেওয়াজ বারী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. ইসমে আজম জিকো।
এদিকে বাংলাদেশ স্পাইন সোসাইটিও বিশ্ব স্পাইন দিবস পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসচেতনামূলক একটি শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গনি মোল্লাহ, বাংলাদেশ অর্থোপেডিক্স সোসাইটির সভাপতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. মোনায়েম হোসেন ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
আরকেআর/এসএ