ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের দেশের ১ কোটি ৩৩ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে শেরাটন হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়, বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জন এবং ১ বিলিয়ন লোকের মধ্যে ২৮১ মিলিয়ন অভিবাসী এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ রাষ্ট্রহীন হয়েছে। চলতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৭ দশমিক ১ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩ দশমিক ৩ মিলিয়নে পৌঁছতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, দ্বন্দ্ব, বাণিজ্য এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই বাস্তুচ্যুত ও অভিবাসন সমস্যা বাড়াচ্ছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশ তিনটি বড় ধরনের অভিবাসী সমস্যা প্রত্যক্ষ করেছে। যেখানে মিয়ানমারের নাগরিকদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, যাদের প্রত্যেকের খাবার, চিকিৎসা ও বসবাসের ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে।
শরণার্থী এবং অভিবাসী স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকে ভালোভাবে মোকাবিলা, পেশাদার দক্ষতা ও সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য দেশ ও অঞ্চলগুলিকে সহায়তা করতে পাঁচ দিনব্যাপী এই আয়োজন করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
বাস্তুহীন এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্য ও অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক ডা. সান্তিনো সেভেরোনি বলেন, বার্ষিক গ্লোবাল স্কুল অন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেন্ট হেলথ হচ্ছে ডব্লিউএইচও হেলথ অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের একটি ফ্ল্যাগশিপ এবং প্রচারের জন্য গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান। যা বাস্তবায়নের দিকে উদ্বাস্তু ও অভিবাসী স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আঞ্চলিক এবং দেশীয় অফিসগুলোর সঙ্গে কৌশলগত এবং অপারেশনাল সহযোগিতা জোরদারের জন্য একটি বড় সুযোগ।
ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক ড. টেডরস আধানম ঘেব্রেইসুরস বলেন, অভিবাসন এবং বাস্তুচ্যুতি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ওপর গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে এবং সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পার্থক্য, আর্থিক বাধা, কুসংস্কার এবং বৈষম্য সবই উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। শরণার্থী গ্লোবাল স্কুলের মাধ্যমে শরণার্থী এবং অভিবাসীদের আরও ভাল সেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা তৈরি করাও একটি লক্ষ্য।
সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, স্বাস্থ্যের অধিকার সর্বত্র সব মানুষের জন্য সমান অধিকার। বিশেষ করে উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীদের জন্য প্রসারিত। কারণ সত্যিকার অর্থে সম্মানিত, সুরক্ষিত এবং পরিপূর্ণ হতে হলে, স্বাস্থ্যের অধিকার অবশ্যই সবচেয়ে প্রান্তিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ভালোভাবে দিতে হবে, যারা এখনো সমস্যায় এবং ঝুঁকিতে আছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রেক্ষাটের চিত্র ও চ্যালেঞ্জ একই নয়, সমাধানও একই না। তবে সব দেশ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এমন একজন স্বাস্থ্য কর্মী যিনি প্রশিক্ষিত, সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল।
ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ শুধুমাত্র তাদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাই দেয়নি, আরও অনেক কিছু করেছে। যার মধ্যে সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়াও রয়েছে। এছাড়াও সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং আইনি দুর্বলতাগুলি মোকাবিলার জন্য সমন্বিত চেষ্টাও করছে।
পাঁচ দিনব্যাপী এই আয়োজনের বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বেসরকারি সংস্থা, যুব প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরাও অংশগ্রহণ নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
আরকেআর/এমএমজেড