কলকাতা: খাদ্য বৈশিষ্ট্যে বাঙালি পরিচয় মাছে-ভাতে হলেও প্রতিদিন বাঙালির ভাতের পাতে কোনো না কোনো শাক বা সবজি থাকে। অনেকে তা রাখেন উপকারিতা জেনে, আবার অনেকে খান স্বাদের কারণে।
তাই তারা জানাচ্ছেন, বিষমুক্ত সবজি পেতে নিজেরাই কিছু না কিছু বাড়িতে চাষ করে ফেলুন। যাকে বলা হয়, ‘কিচেন গার্ডেন’। এই কিচেন গার্ডেনে জৈব পদ্ধতিতে কিভাবে সবজি চাষ করলে বিষমুক্ত ফলন পাওয়া যাবে পাশাপাশি বেশি দামে বাজার থেকে সবজি কেনার প্রয়োজন পড়বে না এবং সংসারের খরচে সাশ্রয় হবে, প্রয়োজনে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে সবজি বাজারজাতও করা যেতে পারে। এমনই নানান তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যানপালন বিভাগ।
রাজ্য সরকারের উদ্যান পালনকর্তা ডক্টর দেবাশীষ মান্না অভিমত, মানুষকে সচেতন করায় তাদের মূল উদ্যোগ। বাড়ির সংলগ্ন বা রান্নাঘরের আশপাশের জমি বা খোলা ছাদে নানা পদ্ধতিতে বিভিন্ন রকম শাকসবজি ও ফলনের চাষ করা হয়। কিচেন গার্ডেন বলি।
তাঁর তথ্য মতে, ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান পরিষদ অর্থাৎ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) -এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৩০০ গ্রাম শাক- সবজি এবং ৮৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে ১২৫ গ্রাম সবুজ পাতা জাতীয় শাকসবজি, ১০০ গ্রাম যেকোনো ধরনের আলু, যেমন সাধারণ আলু, রাঙা আলু, মেটে আলু ইত্যাদি। এবং ৭৫ গ্রাম অন্যান্য সবজি খাওয়া দরকার।
কিন্তু ভারতীয়রা গড়ে প্রতিদিন ১০০ - ১২৫ গ্রাম শাকসবজি খেয়ে থাকেন। বাকিটা ডাল বা অন্যান্য দানাশস্য ব্যবহার করে থাকে। এর কারণ, ভারতীয়রা সবজি ও ফলের গুনাগুন সঠিকভাবে না জানা এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম উৎপাদনই এর জন্য দায়ী। অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় ফলের চাহিদা পূরণের জন্য কিচেন গার্ডেন এর কোন অংশে কয়েকটি ফলের গাছ যেমন আম, পেঁপে, কলা লেবু, সজনে গাছ লাগালে সবজির পাশাপাশি ফলের চাহিদা পূরণ করা যায়। কিচেন গার্ডেনের মধ্য দিয়ে এই সচেতনতা তৈরি করাই রাজ্য সরকারের উদ্যান পালনের কাজ।
দেবাশীষ মান্নার অভিমত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রয়োজনীয় সবজি ফলানোর জন্য এক শতক জমি প্রয়োজন। এই হিসেবে স্বামী-স্ত্রী সন্তান মা বাবা অর্থাৎ একটি পাঁচ জনের পরিবারের জন্য কিচেন গার্ডেন করতে পারলে, টাটকা সবজি প্রতিদিন যেমন পাওয়া যাবে, তাতে শরীরের শর্করা, ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ লবণের ঘাটতি মিটবে, বাড়ির আশপাশের খালি জমি পরিষ্কার থাকবে, অপুষ্টিজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং বিষমুক্ত সবজি পাওয়া যাবে। পাশাপাশি আর্থিক সাশ্রয় অনেকটা হবে।
তার তথ্য মতে, বাড়ির যেখানে রোদ-হাওয়া যুক্ত খোলামেলা জমি আছে তা কিচেন গার্ডেনের জন্য উপযুক্ত। যারা ফ্ল্যাট বাড়িতে বসবাস করেন, সেক্ষেত্রে ছোট ছোট আবাসিক গুলো সকলের সহযোগিতায় বাড়ির ছাদে বা আবাসিকের আশপাশের জমিতে কিচেন গার্ডেন পদ্ধতি মেনে চাষ করা সম্ভব।
সেক্ষেত্রে মাটির দোয়াশ হলে ভালো হয়, না হলে পরিমাণ মতো জৈব সার ও অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে মাটি উর্বর করে নিতে হবে। জমিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে এবং সপ্তাহে একদিন দেখভাল করতে হবে। এমন কিছু সামান্য নিয়ম মেনে চললে সারা বছরই বিষমুক্ত মৌসুমী সবজি বাড়িতে বসে পাওয়া যাবে। এতে যেমন শরীরে অপুষ্টিজনিত সমস্যা মিটবে তেমন সবুজের সংস্পর্শে মানুষের মনের পরিবর্তন ঘটছে। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে পজিটিভ এনার্জি। কিচেন গার্ডেন কিভাবে বানাতে হয় এমনই নানান তথ্য দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যান পালন বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
ভিএস