কলকাতা: আগামী ৭ মার্চ দোল উৎসব। তার পাঁচ দিন আগেই বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতে উড়ছে সবুজ লাল আবির; ফাটছে পটকা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, এই ইঙ্গিত পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের কাছে অশনি সংকেত। শিক্ষক দুর্নীতির প্রতিফলন পড়ল এই ভোটে। শাসক দলের কাছে পরিস্থিতি এতটাই জটিল হলো যে, সাগরদিঘির সংখ্যালঘু ভোটও পড়ল তৃণমূল বিরোধী বাম কংগ্রেস জোটে। এই জোটের ফল আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে অন্য সমীকরণ হতে চলেছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা।
যদি এ নিয়ে শাসক দলে বিস্তর মতভেদ আছে। রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার (১ মার্চ) সাংবাদিকদের বলেছিলেন, উপনির্বাচনে কে জিতবে জানি না, তবে দিদিমনির দল (তৃণমূল) কোনোভাবেই নয়।
শাসক দলের মন্তব্য, বিরোধীদের সেটিংয়ের কারণে পরাজয়। তবে যদি এটাও সত্য হয় তাতেও ভয় কিন্তু থেকে গেলো শাসক দলের অন্দরে।
প্রসঙ্গত, ৭২ সালের পর থেকে এখানে কংগ্রেস কোনোকালেই জেতেনি। তৃণমূল জমানার আগে সাগরদিঘি বামদুর্গ বলেই পরিচিত ছিল। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস বামেদের বুঝিয়ে জোট করায় ফায়দা পেল।
তৃণমূলের তিনবারের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহা মারা যাওয়ায় উপনির্বাচন হয়েছে সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে। সেখানে বাম-কংগ্রেস জোট করে নির্বাচনে লড়াই করায় এবার এই আসনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল।
সাগরদিঘি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পেরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর হুঙ্কার, মমতাও অপরাজিত নন, তাকেও পরাজিত করা যেতে পারে প্রমাণ করল সাগরদিঘি। বাংলায় চোরতন্ত্র উচ্ছেদ করে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।
অধীর চৌধুরীর অভিমত, জোটই শেষ কথা। আমরা বামেদের সঙ্গে জোট থেকে সরে যাইনি। সিপিআইএম-রাই মাঝে অন্য কিছু মনে করেছিল। তবে ফের ওরা জোটে ফিরেছে। এ জন্য বিমান বসু, মহ. সেলিমকে ধন্যবাদ।
তৃণমূলের তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী ছিলেন বাইরন বিশ্বাস এবং বিজেপি প্রার্থী ছিলেন দিলীপ সাহা। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিসকে ২৩,৩৩০ ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী বাইরনকে হেলায় হারিয়ে দিল। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ৩টি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসছে তৃণমূল। তবে সব সমীকরণ গুলিয়ে দিল বাম-কংগ্রেস জোট।
তবে তৃণমূলের পরাজয়ের একাধিক কারণের মধ্যে অন্যতম বলে যা মনে করা হচ্ছে, তা হলো ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জেলে রাখা। গত ২১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতার ধর্মতলায় কর্মসূচি পালনে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ। রাজ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ছাড়া বিরোধীদের মধ্যে নওশাদই একমাত্র জিতেছিলেন। আইএসএফ সেবার নতুন করে তৈরি হয়ে জোট বেঁধেছিল বামেদের সাথে।
প্রতিষ্ঠা দিবসে নওশাদ ও তার দলের লোকেদের গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদাদের বংশধর নওশাদকে জামিন না দিয়ে একের পর এক থানায় নানা ধারায় মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল আইএসএফ। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) ভোটগণনার মধ্যেই ৪০ দিন পরে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন নওশাদ।
নওশাদ ফুরফুরা শরিফের অন্যতম পীরজাদা। রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, নওশাদের মতো একজন ধর্মীয় এবং সংখ্যালঘু নেতাকে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেননি সাগরদিঘির সংখ্যালঘু ভোটাররা। এই সাগরদিঘির ৬৪ শতাংশ ভোটারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
সংখ্যালঘু বিধায়ককে দীর্ঘদিন জেলে আটক রেখে সংখ্যাগুরুকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টাই শাসক দলের কাছে ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ চলে গিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে। জোটের এই মডেল আগামীতে দিশা দেখাতে পারে পঞ্চায়েত ভোটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ