কলকাতা: রাহুল গান্ধীকে সরকারি ভবন ছাড়ার নোটিশ দিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে মোদি সরকার। কারণ, একা রাহুল নন, সরকারি ভবন ছেড়ে দিলে কোথায় থাকবেন তার নিরাপত্তা কর্মীরা? তারা তো একজন বা দুজন না, কম করে ৫৫ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে এই কংগ্রেস নেতার।
সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে এএসএল অর্থাৎ অ্যাডভান্স সিকিওরিটি লিয়াজোঁ। এতদিন এসব নিরাপত্তা কর্মীরা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সরকারি ভবনেই থাকতেন। কিন্তু, এখন তাদের কোথায় রাখা হবে? এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরেই চলছে জল্পনা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে রাহুলের সঙ্গে আলোচনাও করছে।
মোদি পদবী বিতর্কে গত ২৪ মার্চ সাংসদ পদ খারিজ হয়েছে রাহুল গান্ধীর। এরপর ২৭ মার্চ লোকসভার হাউজিং কমিটি এক নোটিশে রাহুলকে আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ভবন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে লোকসভার সদস্য ছিলেন রাহুল গান্ধী। সাংসদ থাকাকালীন নয়াদিল্লির ১২ তুঘলক রোডে সরকারি ভবন বরাদ্দ ছিল তার জন্যে। সেখানেই থাকতেন এতোদিন। এবার সেই ভবন ছাড়তে চলেছেন রাহুল। তিনি ভবন ছেড়ে দিলে তার নিরাপত্তা রক্ষীরা কোথায় থাকবেন?
কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহেই রাহুল ভবন ছাড়ার পরিকল্পনা নিতে পারেন। সেই মোতাবেক শুরু হয়ে গেছে প্যাকিংয়ের কাজ। আপাতত তিনি মা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ১০নং জনপথের বাংলোতেই থাকবেন। যদিও জানা যায়, দলের অনেকেই রাহুলের জন্য নিজেদের বাড়ি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, রাহুল তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, আপতত মায়ের সঙ্গেই থাকবেন তিনি।
তবে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে রাহুলের আরও ১২ জন ব্যক্তিগত কর্মী রয়েছেন। তাদেরও তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে! এতদিন তারাও রাহুলের সঙ্গে সরকারি ভবনেই থাকতেন। যারা কিনা রাহুল গান্ধীর হয়ে রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী কেন্দ্রের কাজকর্ম দেখতেন। যদিও তাদের থাকার জন্য কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য মুকুল ওয়াসনিকের ৪৯ লোধি রোডের সরকারি ভবনে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এমপি হিসেবে মুকুল ওই ভবনটি বরাদ্দ পেলেও সেখানে তিনি থাকেন না। তিনি নয়াদিল্লির গলফ লিঙ্কে তার স্ত্রী রবিনা খুরানার বাড়িতে থাকেন। তাই লোধি রোডের সরকারি ভবনে রাহুলের ব্যক্তিগত কর্মীদের থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না বলে জানা গেছে কংগ্রেস সূত্রে।
কিন্তু রাহুলের নিরাপত্তা কর্মীদের কী হবে? ১০নং জনপথে এমনিতেই সোনিয়া গান্ধীর জেড প্লাস নিরাপত্তা কর্মীরা থাকেন। তার ওপর রাহুলেরও ৫৫ জন নিরাপত্তা কর্মীর কোথায় জায়গা দেওয়া হবে? এ নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।
আবার রাহুল থাকবেন এক জায়গায়, তার নিরাপত্তা কর্মীরা অন্য জায়গায়- তাও তো সম্ভব নয়! সাংসদ সদস্য পদ চলে যাওয়ায় রাহুলের নিরাপত্তা কর্মী সংখ্যা কি কমানো হবে? এই প্রশ্নও উঠছে।
এক্স, ওয়াই, জেড, জেড প্লাস সিকিউরিটি- কে, কোন ধরণের নিরাপত্তা পাবেন, তা তো আর এমপি থাকা বা না থাকার ওপর নির্ভর করে না। তা নির্ভর করে জীবন সংশয়ের ঝুঁকির ওপর। তাই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে ২০১৯ সালে রাহুল, সোনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এসপিজি (স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ) নিরাপত্তা বাতিল করা হয়েছিল। যা নিয়ে সে সময় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তাই এখন যদি রাহুলের জেডপ্লাস নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে যে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা আবার সরব হয়ে উঠবে, তা ভালোই জানেন মোদি-শাহরা।
তাই তো ইন্দিরা গান্ধীর নাতি রাহুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় মোদি সরকার। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মীরা কোথায় থাকবেন? মিলছে না তার উত্তর!
এমনিতে রাহুলের সদস্য পদ যাওয়ায় যেন একপ্রকার ‘শাপে বর’ হয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৪৮ বছর পর বিরোধীরা এক হয়ে শাসকের বিরুদ্ধে গর্জে উঠছে। যদিও তা ভোটের বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে এখনও সংশয় আছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাহুল ইস্যুতে একত্রে বিরোধীরা সরব হয়েছে এটাই বা কম কী? তাই রাহুলের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট ভেবে পা ফেলতে হচ্ছে মোদি সরকারকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ০১ এপিল, ২০২৩
ভিএস/এনএস