কলকাতা: ভারতে আতিক আহমেদ (৬২) নামে রাজ্যসভার সাবেক এক সদস্য এবং তার ভাই আশরাফকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপহরণের একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন সাবেক বিধায়ক আতিক।
হত্যা ও হামলার মামলায় বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) আতিক আহমেদ ও তার ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তাদের দুজনকে মেডিক্যাল টেস্ট করানোর জন্য উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল।
হাসপাতালের সামনে, পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে নামতেই আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। ওই ভিড়েই সাংবাদিক সেজে মিশে ছিলেন তিন দুষ্কৃতি। পুলিশি এনকাউন্টারে ছেলে আসাদের মৃত্যু ও তার শেষকৃত্যে যেতে না পারা নিয়েই তাদের নানা প্রশ্ন করছিলেন সাংবাদিকরা।
তখনই দেখা যায়, হঠাৎ একব্যক্তি হাত উঁচিয়ে এসে আতিকের মাথায় পিস্তল ঠেকান এবং ট্রিগারে চাপ দেন। একইভাবে দ্রুত গতিতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করা আতিকের ভাই আশরাফকেও।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সানি, অরুণ এবং লাভলিশ নামে তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে নিজের বাড়ির সামনে খুন হন উমেশ পাল। সেই ঘটনায় তার দুই দেহরক্ষীও নিহত হন। উমেশ হত্যাকাণ্ডের কাহিনি শুরু হয় সিটিটিভি ফুটেজ দিয়ে, আর শেষ হলো অভিযুক্ত আতিকের হত্যার লাইভ ভিডিও দিয়ে।
উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডের ৫১ দিন পর শেষমেশ মৃত্যুতেই এসে থামলো সাবেক বিধায়ক আতিক আহমেদের জীবন।
গুজরাটের সাবরমতী জেল থেকে উত্তরপ্রদেশের জেলে আনার বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আগেই আদালতে আর্জি জানান আতিক আহমেদ। তাকে হত্যা করা হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও বলেন সাবেক এই বিধায়ক।
শুধু আদালতেই নয়, জেলের বাইরেও সাংবাদিকদের আতিক আহমেদ বলেন, হত্যা, হত্যা, হত্যা। ওদের (উত্তরপ্রদেশ সরকার) পুরো পরিকল্পনা আমার জানা আছে। আমাকে খুন করতে চায় ওরা।
গত ১৩ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয় আতিক আহমেদকে। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো শেষ! তবে সরকারকে অনুরোধ করছি যে, আমার বাড়ির নারীদের, বাচ্চাদের ওরা যেন কেউ হয়রানি না করে।
ঘটনাচক্রে ১৩ এপ্রিলই পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় আতিকের তৃতীয় ছেলে আসাদের এবং তার একসঙ্গী গুলামেরও মৃত্যু হয় একই ঘটনায়। জেলে বসেই ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আতিক। ছেলে আসাদের শেষকৃত্যে যাওয়ার আবেদন করেন তিনি। কিন্তু তা মঞ্জুর করে হয়নি। এরপরই আসাদের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করেন আতিক।
২০০৫ সালে বহুজন সমাজ পার্টির বিধায়ক রাজু পাল হত্যার ঘটনায় অভিযোগ ওঠে আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফের বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই লাগাতার সমস্যা বাড়ছিল দুই ভাইয়ের ওপর। এরপর রাজু পাল হত্যার একমাত্র সাক্ষী উমেশ পালও খুন হন ২৪ ফেব্রুয়ারি। এতেও অভিযোগ ওঠে আতিক ও আশরাফের বিরুদ্ধে।
উমেশ পাল হাত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ জানতে পারে, এই হত্যার অন্যতম হোতা ছিলেন আতিকের ছেলে আসাদ এবং তার দলবল। ক্রমে সেই হত্যাকাণ্ডের জট খুলতেই জড়িয়ে যায় আতিক এবং আশরাফের নাম।
যা শেষ হলো আসাদ ও দুই ভাইয়ের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে কথা বলার সময় আতিক আহমেদকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্করেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করেন তিন যুবক।
এ ঘটনার যে ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা গেছে, পুলিশ ওই হত্যাকারীদের মাটিতে ঠেসে ধরে রেখেছে, আর স্লোগান দিচ্ছেন তারা। লাইভ ভিডিওতে ধরা পড়েছে ভয়ঙ্কর সেই খুনের দৃশ্যও।
তবে তিন হত্যাকারীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কোনো যোগাযোগ ছিল না বলে দাবি করা হয়েছে পরিবারের তরফে। এমনকী এতবড় ঘটনা যে ঘটতে চলেছে, তা বিন্দুমাত্র টেরও পাননি পরিবারের সদস্যরা।
আটক সানির ভাই বলেন, আমরা তিন ভাই। সানি তো অনেকদিন থেকেই বাড়িতে থাকে না। আগে বাড়িতে থাকলেও এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতো। কিছুই করতো না।
আটক অরুণের চাচি বলেন, আমরা জানি না ও কী করতো, কোথায় থাকতো। আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে যোগাযোগ নেই।
আটক লাভলিশের বাবা জানান, দীর্ঘদিন থেকে ছেলের সঙ্গে বিন্দুমাত্রও যোগাযোগ নেই তার। তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সংযোগ নেই। ও বাড়িতেও থাকত না।
এদিকে, ঘটনার পরেই রাতারাতি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তারপরেই গোটা রাজ্যে ১৪৪ ধারা জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখনও উত্তরপ্রদেশজুড়ে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ১৬ এপিল, ২০২৩
ভিএস/এনএস