কলকাতা: কলকাতায় ১৪৯ বছরের সেতু বিবর্তনের শেষ অধ্যায় শুরু হয়েছে আগামী ১২ এপ্রিল। শহরে সূচনা হয়েছে, এক নতুন ইতিহাসের।
ফলে আর শুধু সেতু নয়, গঙ্গার নদীর সুড়ঙ্গপথ দিয়ে জুড়ে গেছে হাওড়া-কলকাতা। গোটা ভারতে নদীর তলা দিয়ে মেট্রোরেলে এমন যাতায়াত এই প্রথম।
১৮৭৪ সাল, ব্রিটিশ উপনিবেশের রাজধানী কলকাতা। ১৯ বছরের চেষ্টায় প্রথমবার সেতুপথে জুড়েছিল দুই শহর, কলকাতা এবং হাওড়া। গঙ্গাবুকে তৈরি হয়েছিল প্রথম ভাসমান সেতু। মাঝে ২০০ ফুট খুলে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা ছিল সেই ব্রিজে। কিন্তু গরুর গাড়ির দাপটে বেশিদিন নিশ্চিন্ত থাকতে পারেনি ব্রিটিশ।
বিস্তর আলোচনা শেষে ১৯৩৭ সালে শুরু হয় ক্যান্টিলিভার সেতুর কাজ। একসময় যার নাম ছিল হাওড়া ব্রিজ। বর্তমানের যার নাম রবীন্দ্র সেতু। পরবর্তীতে ১৯৪৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাতের অন্ধকারে যাত্রীবিহীন ট্রাম চালিয়ে উদ্বোধন হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর সেই বিস্ময়ের। হাওড়া এবং কলকাতার যোগাযোগে সেই সেতু দিয়ে সব রকম যানবাহন চলাচল হত। তবে পরবর্তীতে হাওড়া সেতুর উপর চাপ কমাতে ১৯৭৮ সালে নির্মাণ শুরু হয় আরও একটি কেবল-স্টেইড বা ঝুলন্ত সেতুর। যেটি পরিচয় পায় দ্বিতীয় হুগলি সেতু নামে। বর্তমান যার নাম বিদ্যাসাগর সেতু। ১৯৯২ সালে ১০ অক্টোবর সূচনা হয় সেই হুগলী সেতুটির।
গত ১২ এপ্রিল ভারতে প্রথমবার নদীর তলা দিয়ে ছুটছে মেট্রো। মেট্রো রেলের একাধিক শীর্ষ কর্তারা সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি তুলেছেন।
কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, মহাকরণ (এসপ্ল্যানেড) স্টেশন থেকে হাওড়া ময়দান স্টেশন অবধি দুটি রেক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রথমে মেট্রোর এমআর-৬১২ রেকটি গঙ্গার তলা দিয়ে ছুটেছে। ওদিন, সকাল ১১ টা ৫৫ মিনিটে সেটি হুগলি নদী পার করে যায়। তারপর মেট্রোর এমআর-৬১৩ রেকটিও গঙ্গার তলা দিয়ে হাওড়া ময়দান স্টেশন এসে পৌঁছায়।
তবে মেট্রোরেল করপোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিনাথ জয়সওয়াল বলেছেন, ট্রায়াল রান হয়নি। একবার দেখা হয়েছে। তাহলে কবে থেকে গঙ্গার নিচ দিয়ে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক দৌড় শুরু হবে?
মেট্রো সূত্রে খবর, খুব শিগগিরই গঙ্গার সুরঙ্গ দিয়ে মেট্রোর ট্রায়াল রান শুরু হবে। তবে এখনও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানানো হয়নি। ইতোমধ্যে কলকাতার নিউ গড়িয়া স্টেশন থেকে দমদম এলাকার নোয়াপাড়া অবধি মেট্রো চলাচল করছে।
অপরদিকে, সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ অবধি মেট্রো চলাচল করে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে এসপ্ল্যানেড (মহাকরণ) থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত (৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার) পরিষেবা।
গঙ্গা দিয়ে কত পথ অতিক্রম করবে মেট্রো? কত সময় নেবে? কলকাতা মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, গঙ্গার নিচ দিয়ে ৫২০ মিটার ছুটবে মেট্রো। সেই পথ অতিক্রম করতে মাত্র ৪৫ সেকেন্ডে। যে সুড়ঙ্গ দিয়ে মেট্রো ছুটবে, সেটি জলস্তরের ৩২ মিটার নিচে অবস্থিত।
প্রসঙ্গত, গঙ্গার জলতল থেকে প্রায় ১৩ মিটার গভীরে রয়েছে নদীবক্ষ। তারও ১৩ মিটার নিচে তৈরি করা হয়েছে এই মেট্রো টানেল। সুড়ঙ্গের মাথা অর্থাৎ উপরের অংশ থেকে নিচের অংশের ব্যবধান ৬ মিটার। সবমিলিয়ে গঙ্গাবক্ষ থেকে ১৯ মিটার নিচে পাতা হয়েছে মেট্রোর লাইন।
২০১৮ সালে মাত্র ৬৬ দিনে এই ৫০০ মিটার পথের কাজ শেষ হয়েছিল। প্রকল্পের এক কর্তার দাবি, গঙ্গাবক্ষের ক্ষয় হিসেব করেই টানেল পাতা হয়েছে। ১২০ বছরেও তা মেট্রো লাইনের ক্ষতি করতে পারবে না। ভূমিকম্প রোধক নানা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এই প্রকল্পে। তবে এই প্রকল্প বাণিজ্যিকভাবে শুরু হলে হাওড়া ব্রিজের পর এই প্রথম বাংলার দুই যমজ শহর হাওড়া এবং কলকাতা জুড়ে যাবে মেট্রোরেলের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
ভিএস/এসএএইচ