কলকাতা: দক্ষিণ ভারতের ছোট্ট রাজ্য কেরালা। আয়তনে ৩৮ হাজার ৮৬৩ বর্গকিলোমিটার।
রাজ্যটির প্রতিটি পরিবার অতি স্বল্প মূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়ে থাকেন এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই পরিষেবা থেকে বাদ পড়েন না দরিদ্র এবং দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোও। এসব পরিবারের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে কেরালা সরকার। এটাই হচ্ছে কেরালায় ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) সরকারের অন্যতম প্রধান প্রকল্প।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে, ২০২২ সালে কেরালা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক (কেএফওএন) এর মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী লাইসেন্স পায়। যেটি টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের আওতায় পড়ে। এরমধ্য দিয়ে কেরালা ভারতের মধ্যে প্রথম এবং একমাত্র রাজ্য যার নিজস্ব ইন্টারনেট পরিষেবা রয়েছে। ভারতের মধ্যে একমাত্র কেরালার ক্ষমতাসীন সরকার মনে করে ইন্টারনেট তাদের মৌলিক অধিকার এবং এটা তাদের প্রাপ্য। তবে এর অন্য কারণ হল, ২০১৯ সালে এক জনস্বার্থ মামলায় কেরালা হাইকোর্ট ইন্টারনেটকে শিক্ষার মৌলিক অধিকারের অংশ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল।
সেই সময় থেকেই কেরালা মন্ত্রিসভা এই ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য প্রাথমিক ১ হাজার ৫৪৮ কোটি রুপির অনুমোদন দিয়েছিল। যার মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে ইন্টারনেট সরবরাহ হয়ে থাকে। সেই প্রকল্প অনুযায়ী, কেরালার ২০ লাখ দরিদ্র এবং দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী পরিবার এবং ৩০ হাজার সরকারি অফিস বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়ে থাকে। এই প্রকল্পর কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কেরালার দেখাদেখি ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে তামিলনাড়ু এবং তেলেঙ্গানা কিছু সময়ের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যের ইন্টারনেট সরবরাহ করার প্রস্তাব আনলেও পরবর্তীতে সামাল দিতে না পারায় বন্ধ করে দিতে হয়। ফলে ভারতের মধ্যে একমাত্র কেরালাই একমাত্র উদাহরণ, যাদের সরকার মনে করে শিক্ষার প্রযোজনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ইন্টারনেট, শিক্ষা যেমন সার্বজনীন মৌলিক অধিকার তেমন ইন্টারনেটও। সে কারণেই কেরালা সরকার ইন্টারনেটের অধিকারকে মৌলিক নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রত্যেক নাগরিককে ফাইবারনেটের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করেছে।
এরপরই আছে কেরালা আরও একটি স্টোরি। ভারতের মধ্যে প্রথম রাজ্য যেখানে সরকারের প্রতিটি স্তরে ‘ই-গভর্নেন্স’ চালু হয়েছে। অর্থাৎ কেরালা ভারতের মধ্যে এমন এক রাজ্য যেখানে সম্পূর্ণ সিস্টেম ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। রাজ্যটি প্রায় শতভাগ কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সম্প্রতি রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন ‘টোটাল ই-গভর্নেন্স কেরালা’ অর্থাৎ ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ ই-শাসিত রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করেছেন পিনারই। সেভানাম নামে একটি পোর্টালের মধ্য দিয়ে ৯০০টির মতো পরিষেবা যুক্ত করছে কেরালা। যার মধ্য রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি রাজস্ব, সম্পত্তির নথিপত্র, পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের অত্যাবশ্যক পরিষেবাগুলি।
এখানেই শেষ নয়। কেরালার ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিশ্রুতি রাজ্যটিতে আর কেউ গৃহহীন থাকবে না। ইতিমধ্যে কেরালা সরকারের ‘প্রজেক্ট লাইফ’ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে তিন লাখের বেশি গৃহহীনকে ২বিএইচকে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। আরো দেড় লক্ষাধিক ফ্ল্যাট চলতি বছরেই দেওয়া হবে এবং তা সম্পন্ন হলে কেরালাই ভারতের মধ্যে প্রথম 'জিরো হোমলেস' রাজ্যর শিরোপা পাবে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, উন্নয়নের স্বাদ সবাইকে আস্বাদন করতে হবে। সরকারের উন্নয়নের নামে মানুষ এ রাজ্যে গৃহহীন থাকবে, তা হবে না।
এছাড়া দক্ষিণ ভারতের ছোট্ট এই রাজ্যে শিশু মৃত্যুরহার, মাতৃ মৃত্যুরহার, জন্ম হার, মৃত্যুহার, মোট প্রজননহার, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার, সব পর্যায়ের শিক্ষিতের হার, স্বাস্থ্যসেবার উন্নত পরিকাঠামো, চাষবাদে আমূল পরিবর্তন, রেশনের মাধ্যমে খাদ্য শস্যে ভর্তুকি, রাজনৈতিক উন্নত চিন্তাশক্তিসহ নানা সামাজিক সূচকে বিশ্বের বহু উন্নত দেশকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ফলে ভারতে অসম্ভব বলে এখনও যা বিবেচিত হয় তা কেরলের ক্ষমতাসীন সরকারের মাধ্যমে এখন সত্যি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
ভিএস