কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার (২৬ জুন) কোচবিহার জেলার চান্দেমারি এলাকার প্রাণনাথ হাইস্কুলের ময়দানে তৃণমূল নেত্রীর প্রথম নির্বাচনী সভায় আগাগোড়াই নিশানায় ছিল ভারতের শাসকদল এবং কেন্দ্রীয় সরকার।
গত ২৩ জুন বিহারের পাটনা জেলায় একমঞ্চ ভাগ করে নিয়েছিলেন মোদি বিরোধী ১৭ রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। উদ্দেশ্য ভারতের ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। সেই ভোটের আগে বিরোধী ঐক্যকে শান দিতে মহা বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। বৈঠকের মধ্যমণি ছিলেন বাংলার নেত্রী। পাশেই ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিসহ অন্যান্য দলের প্রধানরা। মমতার পরামর্শেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার পাটনায় বিরোধী দলগুলিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
এরপরই পশ্চিমবঙ্গে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে বাম ও কংগ্রেস। সুযোগ বুঝে প্রচারের কৌশল পাল্টেছে বিজেপিও। বাম-কংগ্রেস দলের একাংশের অভিমত, বাংলায় শাসক দলের হিংসার যারা জর্জরিত, কীভাবে সেই নেত্রীর হাত ধরা সম্ভব! পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে বাংলার মানুষকে তারা কী বোঝাবেন? যা নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে দুই দল।
যদিও সিপিআইএমের সম্পাদক মো. সেলিমের অভিমত, রাজনীতি আর মতাদর্শ এক নয়। মতাদর্শের কারণে কেন্দ্রীয় স্তরে মমতার পাশে আছি। তবে বাংলায় লড়াই জারি থাকবে। একই মত রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলায় কংগ্রেসের লড়াই চলবে। পাটনায় বৈঠকের কোনো প্রভাব রাজ্যে পড়বে না।
তবে কৌশল পাল্টে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, রাজ্যে দলের কর্মীরা যখন তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত, সেই সময়ে কংগ্রেস ও সিপিআইএমেরর নেতারা পাটনায় বসে মমতার সাথে ‘সেটিং’ করছেন। বারে বারেই আমরা দাবি করে আসছি, এরা তৃণমূলের ‘বি’ টিম হয়ে কাজ করছে। ফলে কিছুটা দ্বিধায় বাম-কংগ্রেসের সমর্থকরা। আর তা যেন মমতা আরও স্পষ্ট করলেন এদিনের জনসভা থেকে। নাম নিলেন না বাম-কংগ্রেসের।
বরং মোদি সরকারকে আগাগোড়া নিশানা করে পঞ্চায়েত ভোটের পাশাপাশি একাধিকবার উঠে এলো আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গও। সেই নির্বাচনকে মাথায় রেখে এবং বিরোধী জোটের সম্ভাব্য সমীকরণ মাথায় রেখেই আক্রমণে কেন্দ্রে ছিল শুধু বিজেপি। আর তার সাথে বিএসএফ-কেও নিশানা করেছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, খবর আছে বর্ডারে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখালে। বিএসএফ ভয় দেখালে ভয় পাবেন না। আমাদের এসে জানান। ভয়ে ঘরে বসে থাকবেন না। কোচবিহারে বিএসএফের গুলি করে মারা যেন অধিকারের মধ্যে পড়ে গেছে।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিএসএফকে বিজেপি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারে বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, আমি প্রশাসনকে বলব, নজর রাখতে। ১৫ কিলোমিটার যেটা ছিল, সেটা গায়ের জোরে একতরফাভাবে ৫০ কিলোমিটার করেছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের আইন অনুযায়ী, সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার ভেতরে এখন বিএসএফ নজরদারি চালাতে পারে।
মমতা বলেছেন, আমার কাছে খবর আছে, নির্বাচনের সময় বর্ডারগুলোয় গিয়ে আপনাদের তারা ভয় দেখাবে। বলবে তুলে নেব, সিবিআই লাগাব, ইডি লাগাব। আমি বলি, ওরা কিছু করতে পারবে না। কারণ মনে রাখবেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের আওতায় পড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় পড়ে না। তাই ভয় পাবেন না। আর তো কয়েকটা মাস। তারপর তো আর দিল্লিতেই থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ