কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত বছর গ্রেপ্তার হন রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবার ইডির হাতে গ্রেপ্তার হলেন মমতার মন্ত্রিসভার তৃতীয় মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের বাড়িতে প্রায় ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরই শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে গ্ৰেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (ইডি) কর্মকর্তারা। গত মন্ত্রিসভায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। তখন তার নামে রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। যদিও সে সময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সম্প্রতি রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় প্রভাবশালী বাকিবুর রহমান নামে এক ডিলারকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম উঠে আসে। এরপরই ইডির হানায় মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলেছে। ইডি কর্মকর্তারা নথির বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে বেজায় আপত্তি ছিল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তদন্তের অসহযোগিতার অভিযোগও সামনে আসে। এরপর তদন্তকারী কর্তারা পুরো বিষয়টি দিল্লিতে ইডির সদর দপ্তরে জানায়। তারপরই মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাতেই কলকাতার ইডির দপ্তর সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম আমি। এ চক্রান্তের পেছনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জড়িত। জ্যোতিপ্রিয়-এর বাড়িতে তল্লাশি চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটের নিজের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি শুনেছি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওরা (ইডি) তল্লাশির নামে রান্নাঘরের কৌটো উল্টে দেখছে। বাড়ির মেয়েদের কত রকম পোশাক আছে, তাদের কয়টা শাড়ি আছে তাও জানাতে চাইছে। এসব আমরা সহ্য করব না। সবকিছুর সীমা আছে। সহ্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। ও (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) সুগারের রোগী। ওর যদি কিছু হয় তাহলে আমি বিজেপি ও ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আর্থিক তছরুপের পর প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ওরফে শিব শঙ্কর হালদারকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তখনই ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করানোর জন্য পি কে হালদারের মুখে এ মন্ত্রীর নাম শোনা গিয়েছিল বলে কানাঘুষা চলছিল। ইডিও পি কে হালদারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ সামনে আনছিল। যদিও ইডির তরফে কোনোদিন এ মন্ত্রীর নাম প্রকাশ্যে আনেনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক একবার বলেছিলেন, আইন আইনের পথে চলবে। এখানে কাউকে রেয়াত করা হবে না। যে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যদিও প্রশান্ত কুমার হালদার বা তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় আধার কার্ড, প্যান কার্ড তৈরির যে অভিযোগ উঠেছে তা মানতে চাননি বনমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, আমি কোনো আলটপকা মন্তব্য করতে পারি না। আমি তথ্য জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারি। কারণ আমি একজন মন্ত্রী। তারপর থেকে সব ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। এখন দেখার বিষয় হালদারদের নিয়ে কোনো তথ্য সামনে আসে কি না?
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
ভিএস/আরবি