কলকাতা: বাংলাদেশিসহ বিদেশিরদের জন্য আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হলো কলকাতার মারক্যুই স্ট্রিটে। বিদেশিদের আসা-যাওয়ার অঞ্চল বলে এমনিতে মারক্যুই স্ট্রিট কড়া নিরাপত্তার নজরদারিতে থাকে কলকাতা প্রশাসনের।
মূলত, এ অঞ্চলে প্রতিদিন ভিনরাজ্যের বাসিন্দা থেকে বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের যাতায়াত লেগে থাকে। গত ৫ আগস্ট বাংলানিউজের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ্যে আসে বাংলাদেশিদের সমস্যায় পড়ার ঘটনা। প্রতিবেদনে তুলে আনা হয় ভ্রমণ বা চিকিৎসার কাজে যেসব বাংলাদেশি মারক্যুই স্ট্রিট অঞ্চলে আসেন তারা একাধিক হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছিলেন। প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়, সে অঞ্চলে বেড়েছিল অচেনা মানুষের আনাগোনা, ট্যুরিস্ট হয়রানি, দালাল চক্র, রাতের হকার মার্কেট, অনুমতিহীন সাইকেল রিকশার কারণে সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশিরা। এর জেরে বাংলাদেশিদের টাকা, মোবাইল, ব্যাগ ছিনতাই এর মত বহু ঘটনা সামনে আসছিল।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে মারক্যুই স্ট্রিটের ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয়রা। এর একমাস পরই গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা, পর্যটক কমসহ একাধিক বিষয় বৈঠকে বসেন স্থানীয় থেকে ব্যবসায়ীরা। তখনই ঠিক হয় আরও নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা মুড়ে ফেলা হবে নিউমার্কেটসহ গোটা মারক্যুই স্ট্রিট এলাকা। পাশাপাশি সে অঞ্চলে `মারক্যুই স্ট্রিট- ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি' তরফে দুইটি হেল্প ডেক্স করা হবে।
সেই অনুযায়ী, নভেম্বরে শেষের দিকে শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। নিজেদের অর্থায়নে মারক্যুই স্ট্রিট সংলগ্ন অঞ্চলে বসানো হয়েছে আরও ৩২ টি সিসি ক্যামেরা। রাখা হয়েছে দুটি হেল্প ডেস্ক। এছাড়া বিদেশিরা বিপদে পড়লে কোন ফোন নাম্বার, এবং কোথায় সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, সেইসব তথ্য দিয়ে, চারিদিকে দেওয়া হচ্ছে ব্যানার ফেস্টুন।
এসব সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে ফ্রিস্কুল স্ট্রিটে অবস্থিত শ্রীলেদার্স থেকে পার্কস্ট্রিটমুখী সড়কের মসজিদ অবদি। অপরদিকে সদর স্ট্রিট, কলিং স্ট্রিট, রফি আহমেদ খিদওহি রোড থেকে শুরু করে গোটা মারক্যুই স্ট্রিট জুড়ে বাড়ানো হয়েছে সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তা। ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং হচ্ছে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি অফিস থেকে।
এর কারণে শুধু যে বাংলাদেশি হয়রানির তথ্যই ধরা পড়ছে তা নয়, ভুলবশত হারিয়ে ফেলা মোবাইল, মানিব্যাগও ফিরে পাচ্ছেন অনেকেই। ঢাকা থেকে আগত আশরফ খান বলেন, সিসিটিভি বসাতে সত্যিই উপকার হয়েছে। মারক্যুই স্ট্রিট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আমি হসপিটাল গিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানেক পর টের পেলাম মোবাইল ফোনটা হারিয়েছি। বুঝতে পারি ট্যাক্সিতে ফেলে এসেছি। ফিরে এসে সোসাইটির সাঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা সিসিটিভি দেখে ট্যাক্সি নাম্বার দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। এর একদিন পর থানা থেকে স্মার্টফোনটা ফিরে পাই। ধন্যবাদ সোসাইটি এবং কলকাতা পুলিশকে।
বাংলাদেশিদের কথা ভেবে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে জেনে খুশি বর্তমানে ভ্রমণে আসা বাংলাদেশিরাও। তাদের অভিমত, কলকাতা নিয়ে এমনি কোনো সমস্যা নেই। তবে যতই হোক তারা বিদেশি। ফলে যত বেশি নিরাপত্তা থাকবে তত তারা এ শহরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এ ধরনের ঘটনার পাশাপাশি রাতে ভিন এলাকার কোন ধরনের মানুষ যাতায়াত করছে বা ওই অঞ্চলে নেশার আড্ডা বসছে কিনা, সম্পূর্ণটাই ধরা পড়ছে সিসিটিভিতে। সেইসব দেখেই পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেখানকার স্থানীয় থেকে প্রশাসন।
`মারক্যুই স্ট্রিট- ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র সাথে যুক্ত হোটেল ব্যবসায়ী মনোতোষ সরকার বলেছেন, কলকাতায় যথেষ্ট সেফটি এবং সিকিউরিটি আছে। মারক্যুই স্ট্রিট এর বাইরে নয়। বলতে পারেন, ফরেনারদের জন্য আরও কিছু পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। যাতে সকলেই এর সুবিধা পায়। হসপিটাল ব্যবসায়ী, মোঃ জাফর বলেছেন, পুলিশ, মেয়র, কাউন্সিলর কখন সমস্যা মিটোবে এই ভাবনায় চললে হবে না। অর্থাৎ শুধু প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। তাই এই উদ্যোগ। এবং অবশ্যই বাংলা নিউজকে ধন্যবাদ জানাবো তারা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজ বলেছেন, বলতে দ্বিধা নেই বাংলানিউজের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই আমরা সমস্যার মোকাবিলা করেছি। যে ভুলগুলো আমাদের ছিল, সেগুলো আপনারা যেভাবে পয়েন্ট আউট করেছেন। ওভাবেই আমরা রেক্টিফাই করে ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করেছি। অনেক কিছু আমাদের নজরের বাইরে চলে গিয়েছিল। অবশ্যই আপনাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য, আপনারা বিষয়টাকে সামনে এনেছেন। আরও নিরাপত্তা বাড়ায় সকলের সুবিধা হয়েছে। বাংলাদেশিদের তো সুবিধা হয়েছে, পাশাপাশি আমাদের মত স্থানীয় বাসিন্দারাও এই সুবিধা পাচ্ছি।
আরও পড়ুন:
কলকাতায় মারকুইস স্ট্রিটে চুরি-ছিনতাই, বিপাকে বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশি পর্যটক কমছে, উদ্বেগ নিয়ে বৈঠকে কলকাতার ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
ভিএস/এমএম