কলকাতা: নরেন্দ্র মোদি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন—এই নিয়ে যখন ভারতবাসীর আগ্রহ তৈরি হচ্ছে, তখন জোটের কারো সঙ্গে আলাপ না করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। আর এই প্রস্তাবের জেরেই অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে জোটের অভ্যন্তরে।
গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ছিল বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের চতুর্থ বৈঠক। সেখানে তৃণমূল নেত্রী আচমকাই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করেন।
মমতা বৈঠকে বলেছিলেন, খাড়গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। রাজ্যসভায় তিনি এখন বিরোধী দলনেতা। মল্লিকার্জুনকেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা হোক।
মমতার প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন আমআদমি পার্টির প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে এ প্রস্তাবে মোটেও খুশি নয় জেডিইউ দলের প্রধান তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তার ইঙ্গিত সেদিনই মিলেছিল।
তৃতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ব্যাপারে রাহুল গান্ধীর বিষয় আগ্রহ দেখিয়েছিলেন বিহারের নেতা লালু প্রসাদ যাদব। তাতে সমর্থন দিয়েছিল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন ও শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। নীতিশ সেই সময় প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে মুখ না খুললেও, ধারণা করা হচ্ছিল তার সায় আছে।
নীতিশের দল চাইছিল, নীতিশকেই জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হোক। অথচ রাহুল বা নীতিশের বদলে খাড়গের নাম এসে যাওয়ায় নীতিশের দল জেডিইউ মোটেই খুশি নয়। আর সে ক্ষতি নিরসনেই তৎপর হয়েছেন রাহুল গান্ধী।
মমতার প্রস্তাবের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেডিইউ দলের বিধায়ক গোপাল মণ্ডল কংগ্রেস সভাপতিকে অবজ্ঞা করে বলেছেন, কে এই খাড়গে-ভাড়গে? কেউ খাড়গেকে চেনে না। মানুষ নীতিশকে চেনেন। নীতিশই প্রধানমন্ত্রী হবেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, নীতিশের দলের ক্ষোভ মেটাতেই রাহুল গান্ধী গত বৃহস্পতিবার নিজে নীতিশকে ফোন করেছিলেন। খাড়গের নাম প্রস্তাব নিয়ে রাহুল কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বার্তা দিয়েছেন, এর পেছনে কংগ্রেসের কোনো হাত নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে থেকেই খাড়গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কংগ্রেস কাউকে মুখ করে ভোটে যাওয়ায় বিশ্বাসী নয়। আগে জোট জিতুক, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নাম ঠিক করা হবে।
বৃহস্পতিবার নীতিশের সঙ্গে কথা বলার পরে শুক্রবার রাহুল কথা বলেছেন মহারাষ্ট্রের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গেও। একই বিষয়ে রাহুল গতকাল কথা বলেছিলেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে।
এ বিষয়ে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, আমরা আগেই বলেছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির ‘বি’ টিম হয়ে কাজ করছেন। আচমকা নয়, জেনে বুঝেই তিনি এ প্রস্তাব করেছেন। তিনি চাইছেন অন্তঃকলহ বেঁধে জোট ভেঙে যাক। কিছুদিন আগে রাজ্যে একই আওয়াজ তুলেছিল ওনার দল। কিন্তু, জোট চাইছে আগে ক্ষমতায় আসুক তারপর ঠিক হোক প্রধানমন্ত্রীর মুখ।
প্রসঙ্গত, বিহারে নীতিশের দলের মতো গত ১৩ আগস্ট দক্ষিণ কলকাতার এক কনক্লেভে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল স্লোগান দিয়েছিল, ‘বলছে বাংলার জনতা, প্রধানমন্ত্রী হোক মমতা’। অর্থাৎ চব্বিশ সালের নির্বাচনে দিল্লির মসনদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা।
বিষয়টা সেবারও ভালোভাবে নেয়নি বিজেপি বিরোধী জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া)।
এ বিষয়ে বাম ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় নেত্রী দিপ্সিতা ধর বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে ভুলে গেছেন যে, ইন্ডিয়া জোট তার দল নয় যে, ওনার হ্যাঁতে হ্যাঁ বলে গলা মেলাবেন। যখন এতগুলো রাজনৈতিক দল মিলে একটা জোট হয়েছে তখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু তৈরি হবে। এই সময় দাঁড়িয়ে মমতার কেন মল্লিকার্জুন নাম মনে হলো? আসলে আরএসএস মমতাকে এই দায়িত্বটাই দিয়েছে, যে আপনি ইন্ডিয়া জোটে থাকবেন এবং যত ধরনের পণ্ড করা যায় তা করবেন। মমতা সেই দায়িত্ব পালন করছেন।
দিপ্সিতা আরও বলছেন, তিনি (মমতা) খুব মনোযোগ দিয়ে সেই কাজটা করছেন। কারণ কয়েকদিন আগে তিনি বলেছেন, তার দলের সাথে আরএসএর কোনো অসুবিধা নেই। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করছেন, যে জোট তৈরি হয়েছে, সেখানে যাতে সমস্ত ধরনের গন্ডগোল তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কিছুই চেষ্টা করেন, অনেক কিছু ভাবেন, অনেক কিছু করতে চান। কয়েকদিন আগে রাকেশ রোশনকে চাঁদে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, বিজেপি এবং তৃণমূলে যে আঁতাত রয়েছে, সেটা জনগণ বুঝতে পারছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ