কলকাতা: কলকাতায় রেড মিটের মধ্যে সবচেয়ে কম দাম গরুর মাংসের। শহরে হাড়সহ এক কেজি গরুর মাংসের বর্তমান বাজার মূল্য ২০০-২২০ রুপি।
মাংস বিক্রেতারা জানান, পশ্চিমবঙ্গে গরুর মাংস বেচাকেনায় কোনো সমস্যা হয় না। খাওয়ার ওপর বাছবিচার কম করেন এ শহরের মানুষজন।
কলকাতার মারক্যুইস স্ট্রিট এলাকায় অবস্থান করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণে আসা মানুষজন। মারক্যুইস স্ট্রিটসহ নিউমার্কেট সংলগ্ন পার্ক সার্কাস, বেগবাগান, রিপন স্ট্রিট, সিআইটি রোডসহ মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ২৯টি গরুর মাংসের দোকান রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বেচাকেনা বেশ ভালো। বিশেষ করে শহরের সাপ্তাহিক ছুটির দিন, শনি ও রোববার বেশি কেনাবেচা হয়ে থাকে।
গরুর মাংসের বিক্রি বাড়ে শীত মৌসুমে। এমনই জানিয়েছেন মারক্যুইস স্ট্রিটের গরুর মাংস বিক্রেতা আমিরুল। তিনি বলেন, খাদ্যের বিষয় উস্কানিমূলক আচরণ অন্তত কলকাতায় হয় না। শুধু কলকাতা নয়, গোটা বাংলায় এটা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়নি। সকলেই একতা বজায় রাখেন।
তবে গরুর মাংসের নানা পদের মধ্যে শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে সবচেয়ে বেশি চল ঐতিহ্যবাহী কালা ভুনার। এই রেসিপি পাগলা ভুনাও নামেও পরিচিত। মারক্যুইস স্ট্রিট অঞ্চলে একপ্লেট ভাতের দাম পড়ে ২০ রুপি। সবজিসহ দাম পড়ে ৩০ রুপি। একপ্লেট কালা ভুনা ৭০ রুপি। চাইলে হাফ প্লেটেও মেলে। সেক্ষেত্রে দাম পরে ৪০ রুপি। ফলে দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় শহরের বহু মানুষ এর স্বাদ নেন। যার থেকে বাদ পড়েন না বাংলাদেশিরাও। এ সময়টা কলকাতা ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি আসেন বাংলাদেশিরা। তাদের অভিমত, আশপাশে ঘোরাঘুরি, হইহুল্লোড় আর শপিংয়ের সাথে কলকাতায় খাওয়া-দাওয়া বেশ সাশ্রয়ী।
প্রথমবার একা কলকাতায় বেড়াতে এসেছেন ত্রিশোর্ধ্ব ঢাকাবাসী নিলয়। তার অভিমত, এই সময় কলকাতায় আবহাওয়া বেশ চমৎকার। মারক্যুইস স্ট্রিটের অলিগলি দেখলে তার ৭০ বছর আগের পুরান ঢাকার কথা মনে পড়ে।
তিনি বলেন, শহরের মানুষের ব্যবহার আমার বেশ মনে ধরেছে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, কলকাতায় ৭০ রুপিতে একবেলায় দিব্যি খাওয়া হয়ে যায়। বিষয়টা আমার কাছে খুবই চমৎকার লেগেছে।
নারায়ণগঞ্জের আরিফ জানান, দেশের মতো বাঙালি খাবারের স্বাদ না হলেও, কলকাতার বাঙালি খাবারের স্বাদ ও মান যথেষ্ট ভালো। দেশের তুলনায় দাম অর্ধেক। আমার দেশে যেখানে এক প্লেট কালা ভুনা দাম পরে ১৫০-১৮০ টাকা, সেখানে কলকাতায় মাত্র ৭০ রুপি। অন্যান্য মাছ-তরকারির দামও অর্ধেক। কীভাবে ওনারা এত কম দামে দেন! বিষয়টি উপভোগ করার মতো। খাওয়া দাওয়ার মানও যথেষ্ট ভালো। কলকাতায় খেয়ে শান্তি পাচ্ছি।
সদ্য বিবাহিত সোফিয়া। স্বামীর সাথে প্রথমবার কলকাতায় বেড়াতে এসেছেন। কলকাতায় যেমন কেনাকাটা করে সময় কাটাচ্ছেন, তেমন খাবার খেয়েও তৃপ্তি পাচ্ছেন। সোফিয়া বলেন, ঠিক করেছি কলকাতায় যে কয়দিন থাকব, মন ভরে গরুর মাংস খাব। কি না মিলছে এ শহরে! পায়া, কাচ্চি, নেহারি, তেহারি, লাল ভুনা, কালা ভুনা, ঝোল মাংস, মগজ, কলিজাসহ যত রকম পদ হয়, সবই দেখছি পাওয়া যায় কলকাতায়। দামও সাধ্যের মধ্যে। ৫০, ৭০, ১০০ রুপির মধ্যে। যা আমাদের দেশে ভাবতেও পারি না। খেয়েই বোঝা যাচ্ছে সবকিছু তরতাজা।
মারক্যুইস স্ট্রিট অঞ্চলে চিটাগাং নামে একটি বাঙালি রেস্তোরাঁ বাংলাদেশিদের পাশাপাশি শহরবাসীর মধ্যেও জনপ্রিয়। সোফিয়ার স্বামী রিয়াজুল বলেন, এখানে কালা ভুনা বেশ মজার। তবে কাচ্চি মোটামুটি। মানে আমরা যেরকম বাংলাদেশে মজা করে কাচ্চি খেতে অভ্যস্ত, ঠিক সেরকম নয়। ওরকম মজার না হলেও খাওয়া যায়। সবকিছুর দাম খুবই রিজনেবল।
সংস্কৃতির শহর কলকাতা। এ শহর বজায় রাখে সম্প্রীতি। আর তাই এ শহরে অবাধ বিচরণ সব সম্প্রদায়ের। খাবারেও মেলে বৈচিত্র্য। শহর কলকাতার প্রচলিত প্রবাদ, ‘খাবারের নেই কোনো জাত, নেই কোন পাত / তাই লাগাও হাত’। আর তাই দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় গরুর মাংসের স্বাদ থেকে যেমন বঞ্চিত হন না শহরের একাংশ, তেমন বাদ পড়েন না ভারত ভ্রমণে আসা বাংলাদেশিরাও।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ