ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ধরনা মঞ্চে দ্বিতীয় দিনেও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪
ধরনা মঞ্চে দ্বিতীয় দিনেও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব মমতা

কলকাতা: কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে কলকাতার রেড রোডে ধরনায় বসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৮ ঘণ্টার ধরনার দ্বিতীয় দিন শনিবার (৩ ফ্রেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিজেপি সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তৃণমূল নেত্রী।

পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে (সংসদ নির্বাচন) বাংলায় আমরাই জিতব। সব রাজ্যেই যদি এরকভাবে সব আঞ্চলিক দলগুলো জেতে, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, আমরাই দিল্লি দখল করব। আমি বিশ্বাস করি, বিজেপি চিরকাল থাকবে না। ওরা অনেক অত্যাচার করেছে। আর নয়। বাংলা চায় বিজেপি নিপাত যাক। ভারতের সংবিধান বাঁচাতে হলে বিজেপির যাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, আমরা আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে ধরনায় অবস্থান করছি। তিনি ছিলেন ভারতের সংবিধান প্রণেতা। বাবা সাহেব আম্বেদকর বাংলার বিধানসভা থেকেই দিল্লির সংসদ ভবনে গিয়েছিলেন। সেই পরম্পরা মেনে আমি এখান থেকে ধরনায় অবস্থান করছি। কারণ, আজ আমাদের সংবিধান বিপর্যস্ত। ভারতের সংবিধান বিজেপি নেতারা পাত্তা দেয় না। তারা গাজোয়ারি করে বলছে, ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন। মানে প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গভর্মেন্ট।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে নেত্রী বলেছেন, ইডি মানে এখন আর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট নয়। ইডি এখন ইলেকশন ডিপার্টমেন্ট হয়ে গেছে। বিজেপি নিজের কোনো ক্ষমতা নেই। ওদের একটাই ক্ষমতা, সরকারি এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া। সেসব এজেন্সির সাপোর্ট নিয়ে বিজেপি জিতে থাকে। ওদের লিডাররা সরাসরি বলে, আরও বেশি করে গ্রেপ্তার করো।

এরপরই মমতা ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত সোরেন শর্মার উদ্দেশে বলেন, হিমন্ত একজন আদিবাসী নেতা, আর সেই ইডি দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। অরবিন্দের (দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল) পেছনেও এজেন্সি লেগে আছে। কখন যে কার পেছনে লেলিয়ে দেবে, তার কোনো ঠিক নেই।

বাংলায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলোর আর্থিক সাহায্য আসছে না, এমন মন্তব্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সেন্ট্রাল টিম ১৫৬ বার পশ্চিমবঙ্গে এসেছে, তারা নানাভাবে ইনভেস্টিগেশন করেছে, আমাদের লোকজন তাদের সহযোগিতা করেছে। আমি নিজে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তা সত্ত্বেও তোমরা আমাদের টাকাগুলো ছাড়নি।

সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, আমরা যেদিন জন্মেছি, মায়ের আঁচল থেকে একটা কথাই শিখেছি—হিন্দু মুসলিম শিখ ঈশাই, একে অপরের ভাই ভাই। আমি সব সময় বলি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বাংলা পথ দেখায়। আগেও আমি ৪৮ ঘণ্টা ধরনায় বসেছি।

মমতা আরও বলেন, লড়াই চলছে, আন্দোলন চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার ভাবছে বাংলাকে ভাতে মারবে।  তা হতে দেব না। বাংলার একুশ লাখ মজদুরের টাকা, কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। আমি দেব। আমি কথা দিচ্ছি আগামী একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্য সরকার তাদের ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবে। আমার প্রতি বিশ্বাস রাখবেন, ভরসা রাখবেন। আমরা বিজেপির কাছে ভিক্ষে চাই না। আমরা জয় করতে চাই। কেন্দ্র টাকা না দিলে আমি মিটিয়ে দেব। বাংলা অন্য রাজ্যকে পথ দেখাবে।

রাতভর রেড রোডেই ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হন তিনি। সেই সময় রেড রোডের পাশে গড়ের মাঠে শিশুদের বাস্কেট বল খেলতে দেখে এগিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে দেন। রাজনৈতিক সংগ্রামের শুরু থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাগে যে কয়েকটি জিনিস অবশ্যই থাকে, তার মধ্যে অন্যতম চকোলেট।

শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রেড রোডে আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা ৪৮ ঘণ্টা চলবে মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচি। কেন্দ্রের বকেয়া নিয়ে আন্দোলনের মধ্যেই শনিবার ১০০ দিনের কাজের (কেন্দ্রীয় প্রকল্প) মজুরি বঞ্চিত শ্রমিকদের অর্থ রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এর জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকেই বেছে নিলেন নেত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গত পাঁচ বছরে এটি মমতার তৃতীয় ধরনা কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে গত বছর মার্চ মাসেও রেড রোডে এই একই জায়গায় দুই দিনের ধরনায় অবস্থান করেছিলেন তৃণমূল প্রধান। এর আগে ২০১৯ সালে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।