কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর ভারতে লোকসভা ভোটে প্রথমবার বাংলায় জনসভা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যের বালুরঘাট একং মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার ও খগেন মুর্মুর সমর্থনে আয়োজিত সভায় জনজোয়ার দেখে আপ্লুত তিনি।
বুধবার (১০ এপ্রিল) বিপুল সমাগম দেখে অমিত শাহ বলেন, ভোট তো শুধু সময়ের অপেক্ষা। বাংলায় ভোটের ফল কী হতে পারে তা এ জনসভা বলে দিচ্ছে। এমনকি জনসভা থেকে বাংলার ৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি ৩০ আসন পাবে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অমিত সাহা বলেন, বাংলায় কমপক্ষে ৩০ আসন পাবে বিজেপি। ২০১৪ সালে ভারতে যখন প্রথম মোদি সরকার গঠন হয় তখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুটি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। এরপর ২০১৯ সালের ভোটে বাংলা বিজেপিকে দেয় ১৮ আসন। যার জেরে গোটা ভারতে বিজেপি ৩০০ আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে। আর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কমপক্ষে ৩০ আসনে বাংলা থেকে জয় পাবে বিজেপি। সব মিলিয়ে সমগ্র ভারতে ৩৭০ আসন পার করে তৃতীয়বার মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে।
এরপরই মমতা সরকারের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, শান্তিপ্রিয় পশ্চিমবঙ্গ আজ ওদের আমলে (মমতা সরকার) চারদিকে বোমার শব্দে কাঁপছে। বাংলা অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য দায়ী তৃণমূল ও বামেরা।
আমিত শাহ বলেন, শক্ত ভারত বানাতে হলে বাংলাকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।
অনুপ্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলার চারিদিকে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। কী করে বাংলা শক্তিশালী হবে? মমতা সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। কারণ তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক সেসব অনুপ্রবেশ হওয়া মানুষগুলোই। আসামেও অনুপ্রবেশ সমস্যা ছিল। কিন্তু আসামের মানুষ এর বিরোধিতা করে বিজেপি সরকারকে আনায় একটা মানুষও এখন সীমান্ত পার হয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে পারে না। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, বাংলা ৩০ আসন পেলে মানুষ কী একটা পাখিও পর্যন্ত অবৈধভাবে বাংলায় প্রবেশ করতে পারবে না।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ আইন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে ভুল পথে চালিত করছে। সিএএ কারোর নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে না। আমি মঞ্চ থেকে বলে যাচ্ছি, যারা শরণার্থী আছেন তারা নির্ভয়ে সিএএ ফরম ফিলাপ করুন। তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে এটা মোদি সরকারের গ্যারান্টি। আমি সেসব শরণার্থীদের উদ্দেশে বলছি, এ দেশে আমার যতটা অধিকার আছে, ঠিক ততটাই অধিকার আপনারা পাবেন। তৃণমূল ও দিদি (মমতা) অনুপ্রবেশকারীদের সহযোগিতা করছে। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছে। কিন্তু যেসব হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান শরণার্থী হয়ে বাংলায় আছে তাদের ভয় দেখাচ্ছে।
২০২২ সালে বাংলায় ভয়ঙ্কর বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সবাইকে উল্টো করে টাঙিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে। আপনারা চিন্তা করবেন না। অমিত শাহর অভিযোগ, মমতা বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল ২০২২ সালে ভূপতিনগরে। তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। আমাকে বলুন, বোমা বিস্ফোরণ যারা করেছিলেন, তাদের জেলে ভরা উচিত কিনা? এর তদন্তের ভার হাইকোর্ট এনআইএকে দিয়েছিল। মমতা দিদি এনআইএর ওপর মামলা করে বিস্ফোরণ যারা করেছিল তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। মমতা দিদি আপনার লজ্জা লাগে না। আপনি বোমা বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের বাঁচাতে চান? বঙ্গবাসীর কথা চিন্তা করবেন না।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পর পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্ফোরণ সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। বিস্ফোরণে নাশকতা এতটাই ছিল যে ৪০ ফুট দূরে মরদেহ ছিটকে পড়েছিল। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল।
এরপর ২০২৩ সালের শুরুতে কলকাতা হাইকোর্ট জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা-এনআইএকে বিস্ফোরণের তদন্ত ভার দেয়। সেই মামলায় গত শনিবার (৬ এপ্রিল) ভূপতিনগরে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে এনআইএ। এনআইএ’র গাড়ির কাঁচ ভাঙা হয়। আহত হন এক এনআইএ কর্তা।
তৃণমূলের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিজেপি এনআইএকে কাজে লাগিয়ে তাদের ভোট সংগঠকদের গ্রেপ্তার করাচ্ছে। এরপরই রাজনীতির চর্চায় বড় জায়গা করে নেয় সেই বিস্ফোরণ কাণ্ড।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
ভিএস/আরবি