কলকাতা: নবরাত্রি এমন একটি ধর্মীয় উৎসব যা গোটা ভারতে একসঙ্গে পালন করা হয়। এই উৎসবে মিলিত হয় প্রতিটি রাজ্যের কোটি কোটি মানুষ।
কোটি কোটি ভারতীয়’র সঙ্গে এবারও প্রতি বছরের মতো টানা নয়দিন উপবাস করে নবরাত্রি পালন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শনিবার (১ অক্টোবর) থেকে ভারতে শুরু হচ্ছে নবরাত্রি। চলবে টানা নয়দিন।
সনাতন ধর্মানুসারে নবরাত্রির একেক দিনে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা করা হয়। হিন্দুশাস্ত্রে বলা আছে, নবম দিনে দেবী দুর্গা অশুভ শক্তিরূপী মহিষাসুরকে পরাজিত করেন।
নবরাত্রি শেষদিন হয় দশেরা বা বিজয়া দশমী। মহাকাব্য রামায়ণ অনুযায়ী, শ্রীরামচন্দ্র রাবণকে বধ করেন। অর্থাৎ অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির জয় হয়। এই উৎসবের নাম ‘দশেরা’।
নবরাত্রির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নবরাত্রির দিনগুলো ঠিক করা হয় চন্দ্রমাস ধরে। নিয়ম অনুযায়ী এই উৎসবের সময় নারীরা তিন রঙয়ের পোশাক পরে থাকেন। শুধু তাই নয় পুরাণ মতে এই নয়দিনে নয়টি আলাদা আলাদা রঙয়ের প্রাধান্য থাকে। যেমন, নবরাত্রির প্রথম দিন অর্থাৎ প্রতিপদের রঙ লাল, দ্বিতীয়ার রঙ নীল এবং তৃতীয়ার রঙ হলুদ এই ভাবেই নবমীর দিনের রঙ হয় আকাশী।
হিন্দুমতে বছরে পাঁচটি নবরাত্রি পালন করার কথা বলা আছে। মার্চ এপ্রিল মাসে পালিত হয় ‘বসন্ত নবরাত্রি’, জুন জুলাই মাসে পালিত হয় ‘আষাঢ় নবরাত্রি’, সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে ‘শারদ নবরাত্রি’ বা ‘মহা নবরাত্রি’। এছাড়াও পৌষ ও মাঘ মাসে যথা ক্রমে ‘পৌষ নবরাত্রি, ও ‘মাঘ নবরাত্রি’ পালন করা হয়। এরমধ্যে ‘শারদ নবরাত্রি’ বা ‘মহা নবরাত্রি’ সারা ভারতে পালন করা হয়ে থাকে।
শারদ নবরাত্রি বা মহা নবরাত্রি শনিবার শুরু হয়েছে। নবরাত্রির নয়দিনে দেবী দুর্গার ৯টি রূপের পূজা করা হয়। নবম দিনে পালন করা হয় ‘গর্বা’। ‘গর্বা’ এক বিশেষ ধরনের নৃত্য। মূলত গুজরাটে এ নৃত্যের উৎপত্তি হলেও সর্বভারতে হিন্দি বলয়ে এই নাচের প্রচলন আছে। গুজরাটের আদিবাসীদের এই নৃত্য কলা বর্তমানে ডান্ডিয়া নাচের দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত।
ভারতের বিহার, উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে রাস উৎসবের সময় ডান্ডিয়া নাচ খুবই জনপ্রিয় একটি নৃত্য শৈলী।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ‘গর্বা’ নৃত্য ধারায় ব্যবহৃত গানগুলোতে একাধারে যেমন শক্তি রূপে দেবী দুর্গার বর্ণনা আছে অন্য দিকে শ্রীকৃষ্ণের জীবনের বিভিন্ন উপাখ্যানও এতে বর্ণনা করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে নবরাত্রির উপবাস যথেষ্ট জনপ্রিয় একটি ব্রত। নবরাত্রির প্রথম দিন থেকে উপবাস শুরু করে নবম দিনে রাতে এই উপবাস সমাপ্ত হয়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই উপবাস করে থাকেন। দিনের শেষে ভক্তরা শুধুমাত্র পানি, লেবুপানি বা ফলের রস পান করে থাকেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নবরাত্রি উপবাস পালন করেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এই সময় তিনিও কোনো ধরণের শক্ত খাবার গ্রহণ করেন না। এমন কি বিদেশ সফরের সময় তার এই নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয় না। ২০১৪ সালে আমেরিকা সফরের সময় তিনি নবরাত্রির উপবাস পালন করেছিলেন। এই সময়ে তিনি পান করেছিলেন শুধু মাত্র লেবুপানি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই অভ্যাস দীর্ঘদিনের। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় ঠিক এই ভাবেই তিনি নবরাত্রির উপবাস পালন করতেন। প্রধানমন্ত্রী হবার পর তার কাজের চাপ বেড়েছে, বেড়েছে দায়িত্বও, কিন্তু নবরাত্রির উপবাস পালনে তার রুটিনে কোনো রকম ভাটা পড়েনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৬
ভিএস/জিপি/আরআই