কলকাতা: একদা প্রতিবেশী ছিলেন মহাশ্বেতা আর পূণ্যলক্ষ্মী। মুক্তিযুদ্ধের সময় দু’টি পরিবার বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় নেয়।
হুগলী জেলার চন্দননগরে চলে আসেন মহাশ্বেতা। চমৎকার পুতুল তৈরি করতে পারেন তিনি।
এটাকে সম্বল করেই নতুন জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। এরই কিছু পরে পূণ্যলক্ষ্মী হুগলী এলেও মহাশ্বেতার সঙ্গে তার আর দেখা হয় না। দাঙ্গায় হারিয়ে যায় দু’জনের বন্ধুত্বও।
এমন গল্প নিয়েই স্যাটেলাইট টেলিভিশন ‘জি বাংলা’র সিরিয়াল ‘এই ছেলেটা ভেলভেলটা'।
মুক্তিযুদ্ধ, দেশভাগ বারবার ফিরে এসেছে টেলিভিশনের পর্দায়। তবে এবার একেবারে ভিন্ন আঙ্গিকে। এ প্রেক্ষাপটে এই ‘টিন এজ লাভ স্টোরি’।
গল্প এগোয় একটি প্রেমকে কেন্দ্র করে। প্রথম সাক্ষাতে আবিরকে দেখে শালুক ছড়া কেটেছিলো, ‘এই ছেলেটা ভেলভেলটা, আমাদের বাড়ি যাবি? চার আনা পয়সা দেবো, মুড়কি কিনে খাবি। ’
আবির আর শালুক। জি বাংলার ধারাবাহিক ‘এই ছেলেটা ভেলভেলটা’র প্রধান দুই চরিত্র। রোমান্টিক লাভ স্টোরির বরাবরই টেলিভিশনে কাটতি আছে। দর্শক প্রেমকে নতুন নতুন রূপে দেখতে চান।
গ্রামের মেয়ে শালুক আর মফস্বলের ছেলে আবিরের প্রেম-খুনসুঁটি পর্ব পেরিয়ে বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেকদিন। ধারাবাহিকের পরিচালক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাকে সাহায্য করছেন দিগন্ত সিনহা। প্রায় প্রত্যেক বাঙালির ছেলেবেলায় বহুবার শোনা ছড়া ‘অ্যাই ছেলেটা ভেলভেলটা’ ছোটবেলার স্মৃতি বয়ে আনে। একটা আলাদা অনুভূতি জাগায়।
এই অনুভূতির রেশ ছড়িয়ে পড়ছে ধারাবাহিকের পর্বে পর্বে। তাই প্রতি সোম-শনি সন্ধ্যা ৭ টায় (বাংলাদেশ সময়) প্রদর্শিত জি বাংলার নতুন এই মেগা ধারাবাহিক ‘এই ছেলেটা ভেলভেলটা’ আলাদা করে দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করে নিয়েছে ।
ধারাবাহিকের ভিতরকার খবরাখবর সংগ্রহ করতেই সম্প্রতি সেটে গিয়েছিল বাংলানিউজ। সেখানেই পাওয়া গেলো নায়িকা শালুক অর্থাৎ প্রাপ্তি চট্টোপাধ্যায়কে। এরইমধ্যে ছোটপর্দার বেশ কিছু ধারাবাহিকে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি।
‘তুমি এলে তাই’, ‘রাজযোটক’, ‘মৌচাক’, ‘কিস্তিমাত’-এর পর এই প্রথম মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেন তিনি।
আর আবিরের সঙ্গে তার জুটিকে অনায়াসে রাজযোটক বলা যেতেই পারে।
প্রাপ্তির ভাষায়, ‘শালুক ঠিক যেন আমারই মতো। সে ছটফটে, দুষ্টু আবার সহানুভূতিশীল। খুব আনন্দ পাচ্ছি এই চরিত্রে অভিনয় করে’।
অন্যদিকে আবির রূপী সোমরাজ মাইতিরও এই প্রথম মূল চরিত্রে অভিনয়। তিনিও বললেন সে কথা।
‘আমিও এই প্রথম মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলাম। নিয়মিত কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয় করতে করতে অনেকটাই নিজেকে শিক্ষিত করার সুযোগ হচ্ছে’, স্বীকারোক্তি সোমরাজের।
এই ধারাবাহিকের মূল স্তম্ভ দুই চরিত্র পূণ্যলক্ষ্মী আর মহাশ্বেতা। এ দুই চরিত্রে অভিনয় করছেন দুই দাপুটে অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় আর অনসূয়া মজুমদার। দু’জনেই তাদের চরিত্র নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত।
‘নতুন নতুন ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কাজ করতে বেশ লাগে। পূণ্যলক্ষ্মী পূর্ববঙ্গ (বাংলাদেশ) থেকে এদেশে (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) আসে। ঠিক আমারই মতো। তাই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি’, জানালেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
আর অনসূয়া মজুমদারের ভাষ্য, ‘অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও মহাশ্বেতা চরিত্রে অভিনয় করে আলাদা আনন্দ পাচ্ছি। চেনা মানুষজনের সঙ্গে কাজ করার একটা অন্যরকম মজা আছে। সাবিত্রীর সঙ্গে আবার কাজ করতে পেরেও খুব ভালো লাগছে’।
তিন ছেলে বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার মহাশ্বেতার। তুলনায় পূণ্যলক্ষ্মীর সংসার অনেকটাই নিষ্প্রভ। একটি মাত্র ছেলে, সেটিও অমানুষ। অবলম্বন বলতে মা-বাপ মরা নাতনি শালুক।
হঠাৎই ঠাকুমা’র সঙ্গে আবির শালুকদের গ্রামে হাজির হয়। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে আবিরের সেই অর্থে পরিচয় ঘটেনি। গ্রাম, নদী, সরল জীবনযাত্রা, অফুরন্ত সবুজ আর সবার উপরে শালুক তার গৎ বাঁধা জীবনটাকে বদলে দেয়।
যেহেতু মেগা ধারাবাহিক, তাই মানুষের চরিত্রের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে নানা চরিত্রের মধ্যে দিয়ে। দুই বাংলার গল্প বলেই কখনও শুটিং হচ্ছে টাকির গঙ্গার ধারে, আবার কখনও বজবজের আক্রার গঙ্গা পাড়ের নৌকা ঘাটে।
কখনওবা বোলপুরের সবুজের মাঠে, তো আবার বারুইপুরের গ্রাম্য পরিবেশে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন-শংকর চক্রবর্তী, দিগন্ত বাগচি, সুরজিৎ ব্যানার্জি, রাজশ্রী, শুচিস্মিতা, সমতা প্রমুখ।
ক্যামেরায় মাধব নস্কর। আগামীতে আরও চমক, আরও নাটক, আরও মজা অপেক্ষা করে আছে দর্শকদের জন্য জানিয়েছেন পরিচালক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
ভিএস/এমএ/