কলকাতা: ব্যাংকের দরজায় লম্বা লাইন আর দেখা যাচ্ছে না, নেই এটিএম-এর সামনে চিন্তিত মুখের মানুষের সারি। যেখানে লাইন আছে সেখানে খুব বেশি হলে জনা দশেক মানুষ।
গত ৮ নভেম্বর রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের ঘোষণা দিলে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে তীব্র নোট সংকট দেখা দেয়। দেশের পাশাপাশি বিদেশিরাও ভারতে গিয়ে পড়ে চরম বিপাকে। নতুন নোট সংগ্রহ করতে বেশ নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
এসময় ভারতের একাধিক জায়গা থেকে নোট বদল বা তোলার লাইনে মৃত্যুর খবর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বারবার উত্তাল হয় লোকসভা ও রাজ্যসভা। নোট বদলের ফলে ব্যবসায় বড় রকমের প্রভাব পড়েছে বলে ইতোমধ্যে মত প্রকাশ করেছেন ভারতের ব্যবসায়ী মহল। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় এ প্রভাব বেশি পড়ে।
কৃষিক্ষেত্রেও নোট বাতিলের প্রভাব যথেষ্ট পড়ে বলে কৃষির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানান। বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও মানুষকে বড় রকমের কাটছাঁট করতে হয়।
অর্থ তোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয় ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক। এর ফলে চিকিৎসার মধ্যে থাকা মানুষরা যথেষ্ট সমস্যা পড়ে। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের তরফে পুরনো নোটে লেনদেন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
অনেক ক্ষেত্রে ডলার বা অন্য বিদেশি নোট এক্সচেঞ্জ করার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সমস্যা হয়। এরই সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় কালোবাজারি করার চেষ্টার অভিযোগও পাওয়া যায়।
নরেন্দ্র মোদী সময় চেয়েছিলেন ৫০ দিন। ৫০ দিনের মাথায় দাঁড়িয়ে গোটা পরিস্থিতির নিরিখে বলা যায়, আপাতভাবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়নি সাধারণ মানুষ। শহর অঞ্চলের থেকে গ্রাম অঞ্চলে সমস্যা আরও জটিল আকার নিয়েছে। গ্রাম অঞ্চলে অনেক ক্ষেত্রে এখনও সমস্যা চলছে। চাষের বীজ কিনতে না পারা, সার ও কীটনাশক কিনতে না পারার ফলে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এ নিয়ে তাদের আন্দোলন বজায় রেখে চলেছে সমান তালে। ভারতে নোট বাতিল ইস্যু নিয়ে মোদীবিরোধী রাজনীতির সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অাম অাদমি পার্টি নোট বাতিলের ইস্যুকে প্রথমে দু’হাত তুলে সমর্থন করলেও সমস্যার মুখে পড়ে অনেকেই এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে সরকার জোর দিচ্ছে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে।
ভারতের মতো বিরাট জনসংখ্যার দেশে ডিজিটাল লেনদেন পুরো মাত্রায় চালু করার বিষয়টি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। যদিও নোট সমস্যার ফলে ‘ক্যাশ লেস’ লেনদেন বেড়েছে। তবে সেটা কতটা সুদূর প্রসারী সে বিষয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতে বাজেট পেশ হবে। তখন আরও পরিষ্কারভাবে অর্থনীতিতে নোট বাতিলের প্রভাব চোখে পড়বে বলে মত অভিজ্ঞ মহলের।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
ভিএস/এএ