কলকাতা: কলকাতায় সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘ব্যোমকেশ পর্ব’। এবার শরদিন্দু রচিত ব্যোমকেশ বক্সী-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়।
বাংলানিউজ: ফেলুদা না ব্যোমকেশ, কোনটা আগে পড়েছেন?
আবির: ফেলুদার সঙ্গে পরিচয় অনেক ছোটবেলায়। ব্যোমকেশের সঙ্গে আলাপ হলো ক্লাস এইটে। বইটা আমাকে বাবাই উপহার দিয়েছিলেন। সেই পড়াটা কোথাও যেন আমাকে ভীষণ সাহায্য করছে। আসলে ব্যোমকেশের মধ্যে অনেক স্তর ও নির্যাস রয়েছে। বয়স যত বাড়ে ততই পড়ার মজাটাও বাড়ে।
বাংলানিউজ: শুটিং হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে। কেমন অভিজ্ঞতা?
আবির: আপনারা হয়তো জানেন এর কিছুদিন আগেই আগে আমি ‘হর হর ব্যোমকেশ’ বলে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। ‘হর হর ব্যোমকেশ’-এর থেকে এবারের শুটিংটা ছিল বেশ কঠিন। প্রচুর লোকেশন। ত্রিশ- বত্রিশ দিন ধরে শুটিং চলায় বেশ ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করা গেছে। আমরা যখন পাহাড়ে গেলাম সেইসময় বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই আমরা ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়েছি।
জঙ্গল, পাহাড় মিলিয়ে এমন অনেক জায়গায় শুটিং হয়েছে, যেখানের অনেক স্থানে মেকআপ ভ্যান নিয়ে যেতে সমস্যা হয়েছিল। জঙ্গলে রাতে শুটিং করার অনুমতি পাওয়া যায় না, তাই আমাদের কাজ শুরু হতো ভোরে। ভেবেছিলাম জঙ্গলে যখন কাজ, তখন ভোরে উঠতে হলেও সন্ধ্যার মধ্যে নিশ্চয়ই হোটেলে ফিরতে পারবো। কিন্তু তা হয়নি। একদিন আমাদের শুটিং হলো ডুয়ার্সের খুব পুরনো এক গলফ ক্লাবে। সেটি ঐ অঞ্চলের বিখ্যাত গলফ ক্লাব, নাম রানিখেরা ক্লাব। রানিখেরা ক্লাবে তো অনেক রাত পর্যন্ত কাজ চলেছিল।
বাংলানিউজ: শোনা যাচ্ছে ব্যোমকেশের কারণে ফেলুদা হাতছাড়া হলো। এই ঘটনায় কষ্ট হয়নি?
আবির: হয়েছে, তবে আমি এখন ওই পুরনো প্রসঙ্গ নিয়ে আর আলোচনা করতে চাইনা। ওটা এখন অতীত।
বাংলানিউজ: মুম্বাইয়ে অভিনেতারা প্রতিটি চরিত্রের জন্য ওজন কখনও বাড়াচ্ছেন কখনও কমাচ্ছেন। আপনিও আগের থেকে অনেক রোগা হয়েছেন। সেটা কি ব্যোমকেশ পর্বের জন্য?
আবির: আমি হর হর ব্যোমকেশ থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছি। তবে, এই ছবির জন্য আমাকে প্রচুর খাটিয়েছেন পরিচালক। আমাকে আলাদা করে ঘোড়া চালানো শিখতে হয়েছে। তার জন্য কলকাতা মাউন্টেন পুলিশকে ধন্যবাদ। তারা অনেক কম দিনে আমাকে ঘোড়া চালানো শিখিয়েছেন।
বাংলানিউজ: যিশু সেনগুপ্ত ব্যোমকেশ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একজন পরিচালক বলেছেন, আপনার থেকে এই চরিত্রে যিশু অনেক বুদ্ধিদীপ্ত। আপনি মানেন?
আবির: তিনি তো তার ছবির স্বার্থে কথাটা বলেছেন। সেটাই তো স্বাভাবিক। উল্টেটা বললে আমি সত্যিই অবাক হতাম। অন্য কারও বিষয়ে বলতে চাই না। নিজের বিষয়ে বলি, আমার প্রতি দর্শকের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। মানুষ আমাকে ব্যোমকেশ হিসাবে কল্পনা করছেন, এটা একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে আবার ভয়েরও। আনন্দের কারণ, তাদের চাহিদা বাড়ছে। সেই চাহিদা পূরণ করতে না পারার ভয়ও আছে। এই চাপটা অবশ্য পজিটিভ। নিজেকে অনেক বেশি ভাঙতে পারছি, গড়তে পারছি।
বাংলানিউজ: ব্যোমকেশের সহযোগী অজিত। অজিত হিসাবে আপনার সঙ্গে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এবং ঋত্বিক। কাকে এগিয়ে রাখবেন? শাশ্বত না ঋত্বিককে?
আবির: দু’জনই আলাদা মানুষ। অভিনয়ের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। তুলনাটা কোনোভাবেই আমি করতে চাই না। শাশ্বত দা অনেকটা সিনিয়র। আবার নতুন অজিত হিসাবে ঋত্বিক ইতিমধ্যেই যথেষ্ট ছাপ ফেলেছে। আর তা ছাড়া ঋত্বিক কতো বড় অভিনেতা, সে নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রতিটি ছবিতে ঋত্বিক সেটা প্রমাণ করেছে।
বাংলানিউজ: তুলনাটা হয়তো একটু বাড়াবাড়ি তবুও প্রশ্নটা করেই ফেলছি। আপনার মতে ব্যোমকেশের সেরা পরিচালক কে? সত্যজিৎ রায়, অরিন্দম শীল না অঞ্জন দত্ত?
আবির: সত্যজিৎ রায় কিংবদন্তি। উনি অনেক আগে একটা সময়ে ব্যোমকেশ বানিয়েছিলেন। আমার মতে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা তার ব্যোমকেশের থেকে অনেক বেশি ভালো। চিড়িয়াখানার থেকে সোনার কেল্লা বা জয় বাবা ফেলুনাথ অনেক বেশি ভালো হয়েছে। এটা শুধু আমি বলছি না, সত্যজিৎ রায় নিজেও কোনও একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ব্যোমকেশ আরও ভালো করে করা যেতে পারতো। বাকিরা নিজেদের মতো করে ব্যোমকেশ করছেন। তাই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তুলনা কোনোভাবেই আসে না। তুলনাটা উচিতও না।
বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
আবির: সবাই ভালো থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
ভি.এস/জেডএস