তবে এই বইমেলা শুধু বেচাকেনার মেলা নয়। দুই বাংলার আত্মিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হল এই মেলা।
মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমাদের রুচি, চেতনা, সাহিত্য সংস্কৃতি, চিন্তা ও মনের আবেগের কোনও পার্থক্য নেই দুই বাংলার। নিয়াজীর আত্ম সমর্পণ, দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায়ের বেতার ভাষণ, আত্মসমর্পণের পর বাসভর্তি করে এপার থেকে খুলনা যাওয়া। পথে পথে পড়ে থাকা রাজাকার-আল বদরদের লাশ, মুক্তিযোদ্ধাদের জয়োল্লাস তাঁর স্মৃতিচারণে উঠে আসে।
তিনি বলেন, আমি লেখকদের বলব তারা অনেক লিখুক। তবে বেশি বেশি লিখুক মৌলবাদের বিরুদ্ধে, উগ্রতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান পাঠকদের ধন্যবাদ জানান মেলার আসার জন্য। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমার আজও মনে আছে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন ঢাকায়। কয়েক ঘন্টার জন্য হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। খোঁজ খোঁজ, পরে দেখা গেল তিনি রিক্সা করে ফিরছেন। মীরপুরে গিয়েছিলেন রিক্সা করে। ঢাকা দেখার ইচ্ছা হয়েছিল নিজের মত করে। মমতার লড়াকু মন, ভাব আমার খুব ভালো লাগে।
শেষ দিনে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, বিশেষ অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, কথাসাহিত্যিক তবারক হোসেন।
শুভেচ্ছা-বক্তব্য রাখেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের বাণিজ্যিক সচিব (প্রথম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সভপতিত্ব করেন উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। সাতদিনের এই বইমেলার মূল সহযোগিতা করেন পশ্চিমবঙ্গের ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ড. ইমানুল হক ও তার ছাত্রছাত্রীরা।
এবারে মোট ৫১টি প্রকাশনী এই মেলায় হাজির হয়েছিল। শেষ দিনে মেলা ঘুরে প্রকাশকদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলকাতায় অন্যান্য বারের তুলনায় এবছর বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। তবে যে বইগুলো পাঠকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বা বিক্রি হয়েছে সেগুলি হল বাংলা একাডেমির। এসবের মধ্যে আছে অভিধান, ববঙ্গবন্ধুর কারাগারে রোজনামচা, আনিসুজ্জামানের লেখা বিপুলা পৃথিবী, হুমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় লিঙ্গ, জাতীয় সাহিত্য একাডেমীর প্রকাশনায় জ্যোতি সরকারের পাকিস্তানে জন্মমৃত্যু, অবসর প্রকাশনার গোলাম মুরশিদের হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতিসহ বেশ কিছু প্রকাশনা।
এছাড়া দিব্য প্রকাশনীর হেলাল হাফিজের যে জলে আগুন জ্বলে, দি ইউনির্ভাসিটি প্রেস লিমিটেডের প্রকাশনায় জয়া চ্যাটার্জীর লেখা বাঙলা ভাগ হল ও অন্য প্রকাশকের হুমায়ুন আহমেদের জ্যোৎস্না জননীর গল্প।
সুধীজনের বক্তব্য শেষে সঙ্গীত পরিবেশনা করেন বিশিষ্ট নাট্য ও সঙ্গীতশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মোহরকুঞ্জ থেকে মোমবাতি মিছিল করে রবীন্দ্রসদনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তির পাদদেশে মোমবাতি রাখেন মেলায় উপস্থিত পাঠক, প্রকাশক এবং কর্মকর্তারা। মুখে ছিল আগুনের পরশমনির সুর। মোমের নরম আলো আর রবি স্মরণের মধ্যে দিয়ে কলকাতায় সমাপ্ত হল ৭ম বাংলাদেশ বইমেলা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭
ভিএস/জেএম