তবে ভারতীয় ইমিগ্রেশনে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। তারা দাবি জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্রমণ ট্যাক্স বাতিলেরও।
এসব বিষয় ছাড়াও শান্তিনিকেতনে পড়তে যাওয়ার আগে এর শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠ্যসূচি, ভিসাপ্রাপ্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন স্টুডেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট সেলের কর্মকর্তা ইন্দ্রানী দাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ভাস্কর সরদার।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে কিভাবে ভর্তি হতে পারে?
ইন্দ্রানী দাস: বাংলাদেশি মানে বিদেশি। বিদেশি শিক্ষার্থীরা দু’ভাবে মূলত আসে। এক, ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আইসিসিআর-এর মাধ্যমে। যে দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে চায়-সে দেশে ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসি/হাইকমিশন একটা পরীক্ষা নেয়। তারপর যদি সে ওই পরীক্ষায় পাস করে তখন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে- তাদের সব খরচ ও ফি ইত্যাদি থাকে। যাকে বলা হয়, স্কলারশিপ।
এছাড়া সরাসরিও আসতে পারে বিশ্বভারতীতে। এ বিষয়ে আমি দায়িত্ব পালন করছি। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা দেখি শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশন। আমরা যেগুলো চাই সেগুলো আছে কি-না। তা দেখার পর আবেদনকারীদের ডাকা হয়। কিন্তু সরাসরি যারা আসে তাদের কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে আসতে হয় না। এক্ষেত্রে পরীক্ষা দিতে হবে ভারতীয় ভিসা দেওয়ার সময়। আমরা চাইছি ৬০ শতাংশ মার্কস তাদের দেশীয় রেজাল্ট অনুযায়ী। সেখানে পরে যদি কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী আসে তাকে আবার নিতে পারছি না। কারণ ফরেন কোটায় আসন রাখা হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। এটা আমাদের একটা বড় সমস্যা। এ বিষয়ে একটা অ্যাডমিশন টেস্ট চালু করা যায় কি-না সেটা দেখা হচ্ছে। তবে যেটা দেখা যাচ্ছে, বিদেশি ছাত্রদের মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বেশি আসছে এখানে। বর্তমানে ২০০ জনের মধ্যে ১৫০ জন বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী আছেন।
বাংলানিউজ: এতটা বাংলাদেশি ছাত্র বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? এটা ইতিবাচক দিক নিশ্চয়ই?
ইন্দ্রানী দাস: ইতিবাচক বলতে পারেন। তারা নিশ্চয়ই মনে করছে বিশ্বভারতীর দেওয়া ডিগ্রিটার গ্রহণযোগ্যতা আছে।
বাংলানিউজ: বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কয়টা বিভাগ আছে?
ইন্দ্রানী দাস: না, এখানে এরকম কোনো বিষয় নেই। যে কোনো বিভাগে তারা ভর্তি হতে পারে। মানে যতগুলো বিভাগ আছে সবগুলোতেই। শুধু নিজের দেশের সিস্টেম অনুযায়ী তার রেজাল্ট ৬০ শতাংশ মার্কস আছে কি-না আপাতত তাই দেখা হচ্ছে। তবে ১৫ শতাংশ বিদেশি কোটা থাকে। কিন্তু এটারও দুই ভাগ আছে। যেমন- যারা পিএইচডি করতে আসছে সেখানে কিন্তু তারা কোটায় পড়ছে না। আবার কলা বিভাগ যেমন- সংগীত ও চিত্র ইত্যাদি যেগুলো আছে তাও কোটার মধ্যে পড়ে না। প্রত্যেকটি আমাদের প্রসপেক্টাসে লেখা থাকে, সেটা এখানে এসে দেখা যায় আবার অনলাইনেও থাকে। তবে আমাদেরও কিছু ভাবার সময় হয়েছে। যেমন- বিভাগ অনুযায়ী, যারা ৬০ শতাংশ মার্কস পাচ্ছে তাদের জন্য আসন ভর্তি হয়ে গেলে তখন আমরা সে শিক্ষার্থীর ৯০ পেলেও পাচ্ছে তাকে নিতে পারছি না।
বাংলানিউজ: তাহলে আপনি বলতে চাইছেন ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভড মেরিট এখানে দেখা হচ্ছে না?
ইন্দ্রানী দাস: আপাতত এখন এটাই বলতে পারেন। তবে বিশ্বভারতী ভাবছে, এই প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা যায় কি-না। তবে আসন পূরণ হয়ে গেছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত এমন সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আসেনি। আমাদের বিভাগ অনেকগুলোই আছে, যেখানে আট হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়ছেন। সেখানে আট হাজারে ১৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী নেই। কারণ সব মিলিয়ে ২০০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী বর্তমানে আছে।
বাংলানিউজ: অ্যাডমিশন টেস্ট বছরের কোন সময়ে হয়?
ইন্দ্রানী দাস: সাধারণত যে কোর্সগুলো আমাদের রেগুলার থাকে সেগুলো জুন-জুলাই থেকে শুরু হয়। কিন্তু বিদেশিদের জন্য কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টে ছাড় আছে। বলতে পারেন, ফরেনারদের জন্য প্রক্রিয়াটা একটু শিথিল রাখা হয়েছে। কারণ তারা এখান থেকে কল লেটার পাবে। তারপর ভিসা পাবে। তখন আসতে তো দেরি হবেই। দেখা গেছে একজন, সেপ্টেম্বরে এলো তখন তো তাকে নিতেই হবে।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন কোন দেশের শিক্ষার্থী আছে?
ইন্দ্রানী দাস: এটা প্রতিবছরই আলাদা হয়। জাপান থেকে আসছে। রাশিয়া ও আমেরিকা থেকেও আসে। কোরিয়া থেকে আসছে। এটা নির্ভর করে সেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আবহাওয়া, ভিসা ইত্যাদির উপর। এবছর যেমন বাংলাদেশি বেশি।
বাংলানিউজ: অনেক ক্ষেত্রেই সেমিস্টার চলাকালে ভিসা শেষ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তারা কিভাবে পরীক্ষা দেবে? এ দায়িত্ব কি আপনাদের থাকে না?
ইন্দ্রানী দাস: এরকম কোনো বিষয় এখনো অব্দি ঘটেনি যে, ভিসার জন্য সেমিস্টার দিতে পারেনি। আর যদি ভিসা শেষ হয়ে যায় এখানেই সিউড়ি অফিস থেকে ভিসা বাড়ানো যায়। এটা সমস্যা হয় না। তবে নতুন করে কেউ আবার নতুন কোনো কোর্সে ভর্তি হতে গেলে তখন তাকে দেশে গিয়ে ভিসা নিতে হবে। কারণ স্টুডেন্ট ভিসায় প্রতিটা কোর্স ভারত সরকারের কাছে এন্ট্রি করা থাকে।
বাংলানিউজ: এখানকার বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে যেটা জানা গেছে- সেটা হলো অনেক জায়গায় তাদের যেতে হলে প্রক্টর অফিসে কিছু সমস্যা হয়, বিশেষ করে অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে।
ইন্দ্রানী দাস: দেখুন, বাংলা ভাষায় কথা বললেও মূলত বাংলাদেশিকে মনে রাখতে হবে তারা বিদেশি। আর বিদেশির ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হয়। শিক্ষার্থী শান্তিনিকেতনের বাইরে কোথাও যেতে হলে তাকে কিন্তু এই প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। সে ইচ্ছা করলেই কোথাও ঘুরতে যেতে পারে না। ভারত সরকারের বক্তব্য হলো- যারা পড়াশোনার জন্য আসে তারা এডুকেশন ভিসা নিয়ে আসছে। বেড়াতে যেতে হলে তাকে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসতে হবে। সে এখানকার অনুমতি ছাড়া কলকাতাতেও যেতে পারে না। তবে যদি কোনো এডুকেশন ট্যুর হয় তখন কোনো অসুবিধা থাকছে না। কারণ আপনাকে আগে সবসময় চিন্তা করতে হবে তার নিরাপত্তার বিষয়টি। সে যদি একদিনের জন্য অনুমতি নিয়ে কলকাতায় যায়, তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে লোকাল থানাকে বিষয়টি জানিয়ে রাখি। কারণ মনে রাখতে হবে, বর্তমান পরিস্থিতিটা একটা অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একজন ঘুরতে গেলো এবং সে যদি কোনো পরিস্থিতির শিকার হয় ওই দায় কিন্তু আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ে। আর এই নিয়ম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য। তবে এটাও মনে রাখতে হবে বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে ছেলেদের থেকে মেয়েদের নিরাপত্তা বেশি প্রয়োজন।
বাংলানিউজ: এই নিয়ম কি যাঁতাকল হয়ে দাড়াচ্ছে? কারণ ঘোরাফেরা বাদেও একজন কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যেতে পারে?
ইন্দ্রানী দাস: দেখুন, এটা সমস্যা ভাবলে সমস্যা। যেতে কোথাও অসুবিধা নেই। কিন্তু জানিয়ে যেতে হবে-এটাই নিয়ম। আর কলকাতায় বা বাইরে চিকিৎসা সে করাতেই পারে কিন্তু একদিনের নোটিশে নয়। এমন তো নয়, তাদের অনেকটা দূরে গিয়ে সব সই-সাবত করাতে হবে। সবই তো এর ভেতরে। এক সপ্তাহ আগে থেকে জানালে সমস্যাটা কোথায়? আজকের সামাজিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাটাকে এত লঘু করে ভাববেন না। তবে জরুরি কিছু হলে অনলাইনে ব্যবস্থা তো আছে-ই। সেখানে নথি দিয়ে একটা চিঠি করে দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আমরা রেজিস্ট্রার এবং পুলিশকে জানিয়ে দিই। যাঁতাকলে পড়েছে এমন ভাবার কিছুই নেই।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর জন্য কী বার্তা থাকছে?
ইন্দ্রানী দাস: আলাদা করে ভাগ করবেন না। সবাই আমাদের শিক্ষার্থী, সন্তানতুল্য। ভুল বোঝাবুঝি বা বকাবকি থাকে। এটা তো শিক্ষারই অঙ্গ। তবে একজন বিদেশিকে মনে রাখতে হবে, সে যখন এখানে পড়তে আসে তখন তার পরিবার কিন্তু চিন্তায় থাকে। অনেক আশা নিয়ে তাদের সন্তানকে এখানে পাঠায় তার পরিবার। তাই এখানে মন দিয়ে পড়াশোনাটা করতে হবে। এটা কবিগুরুরে হাতে গড়া আশ্রম তাই আর পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেলালে চলবে না। এখানকার জীবন-যাপন, খাওয়া-দাওয়া অনেকটা আশ্রমিকের মতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
ভিএস/এমএ