এরপর ১৯১৬ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন এবার গড়ে তুলতে হবে ‘মনুষ্যত্ব চর্চার কেন্দ্র’। ১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন কবিগুরু।
১৮৯০ সালে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে পরের বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাদের জমিদারির কাজ দেখাশোনা করার জন্য শিলাইদহে চলে আসেন। তখন কবির বয়স ৩০ বছর। শিলাইদহে জমিদারির কাজে নানা ব্যস্ততার মধ্যেও কবি নিভৃতে সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ থেকে শান্তিনিকেতনে ফেরেন একটা সৃষ্টির সংকল্প নিয়ে।
শান্তিনিকেতনে কবির সেই সৃষ্টির সংকল্প ছিল, ভারতবর্ষে প্রাচীনকালের আশ্রমের শিক্ষা এবং গুরুগৃহে থেকে বিদ্যা অর্জন। এছাড়াও উদ্দেশ্য ছিল স্বদেশপ্রেম। শান্তিনিকেতনে এই ব্রহ্ম বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে স্বদেশী ধাঁচের শিক্ষাদানের বীজও পুঁতেছিলেন তিনি। কবির এই বিদ্যালয় স্থাপনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সম্মতি ছিল। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে তিনি পারিবারিক অর্থে হাতও দেননি। নির্মাণ করেছিলেন নিজের সঞ্চয় এবং স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর অলঙ্কারের বিনিময়ে।
ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে বিদ্যালয়। কবি বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সঙ্গে যোগ করেন সঙ্গীত, চিত্রকলা, নাট্যাভিনয়, শরীরচর্চা, খেলাধুলা, হাতের কাজ, পল্লিসেবা ও সাক্ষরতার অভিযান। তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ রক্ষায়। বিদ্যালয়ে আসতে থাকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছাত্ররা। পরিকল্পনাও বদলাতে থাকে কবিগুরুর। ভাবনায় আসে বিদ্যালয়ের শিক্ষায়, পুরাতনের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন এবং শান্তিনিকেতনকে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করা।
কবি সিদ্ধান্ত নেন, এখানে তিনি আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলবেন। প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞান সাধনা, সংস্কারমুক্ত মনের গঠন, পুঁথিগত ও পরিবেশগত শিক্ষা এবং শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের মৈত্রী-এসব উদ্দেশ্য নিয়েই সর্ব ভাষাভাষির শিক্ষাকেন্দ্র রূপে বিশ্বভারতীর ভিত্তি স্থাপনা হয়েছিল আজ থেকে ১শ’ বছর আগে। দেখতে দেখতে রোববার (২৩ ডিসেম্বর) তার শতবর্ষ পূর্ণ হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮
ভিএস/আরআর