কয়েক শর্ত দিয়ে রাজীব কুমারকে জেরা করতে পারে সিবিআই, এমনটাই জানিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা।
সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই জানিয়েছিল সারদাকাণ্ডে তাদের দেওয়া হয়েছে বিকৃত করা কল রেকর্ড।
এদিকে, গ্রেফতার নয় জেনে ধরনামঞ্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই জয়কে গণতন্ত্রের জয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, এর আগে পশ্চিমবঙ্গে সারদাকাণ্ডে অনেক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু রাজীব কুমারের বেলায় এতো সক্রিয় কেনো মমতা? এছাড়া রাজনৈতিক ধরনামঞ্চে কীভাবে পুলিশ কমিশনার উপস্থিত থাকেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। কারণ ধরনা কোনো রাজনৈতিক দল দিতে পারে, সরকার নয়। তাহলে ওই রাজনৈতিক ধরনামঞ্চে রাজীব কুমার উপস্থিত কেনো?
রবিশঙ্কর বলেন, রাজীব কুমারকে তিনবার তলব করে সিবিআই। ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে একবারও দেখা করেননি তিনি। ২০১৩ সালে সারদাকাণ্ডের পর যে স্পেশাল তদন্তকারী দল গঠন করা হয়, তার চেয়ারম্যান ছিলেন রাজীব কুমার। তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কংগ্রেসকেও এক হাত নেন আইনমন্ত্রী। তার কথায়, ২০১৪ সালে রাহুল গান্ধী টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সমালোচনা করে লিখেছিলেন, ২০ লাখ মানুষের কোটি কোটি রুপি আত্মসাৎ হয়েছে চিটফান্ড দুর্নীতিতে। আজ তিনিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকে সিবিআইয়ের সমালোচনা করছেন।
রবিশঙ্কর এও বলেন, মোদী ক্ষমতায় আসার আগেই সিবিআইয়ের হাতে তদন্তের দায়িত্ব দেন সুপ্রিম কোর্ট। আর সারদা দুর্নীতি কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেসই মামলা করেছিল।
অপরদিকে, একসময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য আইপিএস ভারতী ঘোষ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। মমতাকে যাকে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলেও সম্বোধন করেছিলেন তিনি। কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন। সম্পর্কে তিক্ততা এতোটাই বাড়তে থাকে যে, গত বছরের শুরুর দিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন ভারতী ঘোষ। এরপর থেকেই তার রাজনীতিতে আসা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। রাজ্য পুলিশের খাতায় তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।
সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে মুকুল রায় এবং কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন ভারতী ঘোষ। আর যোগ দিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঢাললেন তিনি।
মমতার ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, সত্যাগ্রহ নয়, অসত্যাগ্রহ আন্দোলন হচ্ছে। গান্ধী সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছিলেন দেশের জন্য, তিনি করছেন একজন পুলিশ কমিশনারের জন্য। এইভাবে কোনো তদন্ত বন্ধ করা যায় না। তিনি কেনো পুলিশ কমিশনারের হয়ে সত্যাগ্রহ করছেন?
মমতার ‘সত্যাগ্রহ ধরনা’ গোটা ভারতে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এর আগে সারদাকাণ্ডে তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। তখন থেকেই কলকাতা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন সিবিআই কর্তারা। শুরু হয়ে যায় ধস্তাধস্তি।
অভিযোগ উঠে, তখন সিবিআই কর্তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে ধরনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন। ওই মঞ্চে কমিশনার রাজীব কুমারসহ উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের উচ্চপদস্থ অন্যান্য পুলিশ কর্তারা। যা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
ভিএস/টিএ