ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

যেভাবে দেখা মিললো ‘মধুমতীর’

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৯
যেভাবে দেখা মিললো ‘মধুমতীর’ কলকাতার খিদিরপুর বন্দরে বাংলাদেশ থেকে যাত্রীবাহী ‘এমভি মধুমতী’

কলকাতা: নামই যখন মধুমতী, তার মিষ্টতা যে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই মধুমতী দেখার আগ্রহ ছিল বেশি। দুই দেশের মধ্যে আকাশ, স্থল ও রেলপথ চালু আছে। অবশিষ্ট ছিল জলপথ। তারও পরীক্ষামূলক যাত্রা সফল।

মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা নাগাদ ৬৯ যাত্রীসহ ‘এমভি মধুমতী’র কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ১৩৩ জন আসেন কলকাতার খিদিরপুর বন্দরে। কিন্তু এই মধুমতীর দর্শন পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

কলকাতার খিদিরপুর বন্দর ঐতিহাসিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্য্যপূর্ণ। পুরো বন্দর ঘিরে আছে বিশাল বিশাল দেয়াল। যা ব্রিটিশ আমলেই তৈরি। আর তাতে ক্রমিক সংখ্যা অনুযায়ী পরপর দূরত্ব বজায় রেখে গেট। দূরত্ব বলতে একটি গেট যদি হয় ঢাকার বনশ্রী এলাকায়, অপরটি গুলশানে। সাধারণের যাতায়াতের জন্য আছে এরকম পাঁচটি গেট। বাকি গেটে ভিন্ন কাজ। গোটা বন্দর বিশাল পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থাকলেও মাঝে মাঝে কিছু জায়গা ফাঁকা। যেখান দিয়ে দেখা যায় জাহাজ। তবে সেখানে দাঁড়ানো বা ছবি তোলা যাবে না। স্পষ্ট করে লেখা লোকচক্ষুর নজরে। মোটামুটি খিদিরপুর বন্দরের অবস্থানটা এরকম। আর প্রতিটি গেটে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের পাহারাদার। ফলে ইচ্ছা করলেই গেট পাস ছাড়া প্রবেশ সম্ভব নয়।
 
শিডিউল অনুযায়ী ২৯ মার্চ বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে এমভি মধুমতি’র কলকাতায় পৌঁছানোর কথা ৩১ তারিখ। পরে এ প্রান্ত থেকে জানা গেলো দুই দেশের সীমান্তে আটকে আছে জাহাজটি। সম্ভবত ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় পৌঁছবে। কিন্তু কখন কোথায় তা কেউই সঠিকভাবে বলতে পারছিলেন না। এরইমধ্যে বাংলাদেশি এক সহকর্মী জানালেন মধুমতী পৌঁছেছে। তুমি প্রস্তুত তো?
 
মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে মধুমতীর অবস্থান জেনে রওনা দেওয়া হলো। আর তার সঙ্গে শুরু হলো হয়রানি। হাতের নাগালে পড়লো গেট নম্বর ৩। গেটে থাকা ব্যক্তি হিন্দি ভাষায় যা বললেন তার অর্থ দাঁড়ালো, জানলেও কোনো তথ্য দিতে পারবো না। গেট নম্বর ৪ থেকে অনুমতি নিয়ে আসুন। বুঝতে পারলাম মধুমতি দেখতে বেগ পেতে হবে। রওনা দিলাম ৪ নম্বর গেটের উদ্দেশে। তাদের কথা গেটপাস না হলে ভেতরে প্রবেশ মিলবে না। সেটা কিভাবে নিতে হয় তার তথ্য মিলবে গেট নম্বর ৫ থেকে। অস্থির চিত্তে জানতে চাইলাম সেখানে তথ্য না হয় পেলাম, কিন্তু পাস দেবে কে? সরাসরি উত্তর, এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না। গেট ৫ এ যাওয়ার পর উত্তর পাওয়া গেলো, বন্দর ট্রাফিক গার্ড অফিসে যান ওখান থেকে গেট পাস দিলে আমরা জানাবো ৪-এ, ৪ জানাবে ৩-এ, তারা ২ নম্বর গেটকে জানালে প্রবেশ করতে পারবেন। কারণ বাংলাদেশি জাহাজ গেট নম্বর ২-এ আছে।
 
জেদ আর বিরক্তি যেন আরও চেপে গেলো। সঙ্গে থাকা ব্যক্তি ফিরে যাওয়ার কথা বললেও আশা ছাড়লাম না। শেষ দেখতে চাই। ট্রাফিক গার্ডের নিচের নিরাপত্তা বাহিনীকে ঠাণ্ডা মাথার ফের বর্ণনা দিলাম। তিনি কম্পিউটার ঘেঁটে জানালেন জাহাজ এসেছে। ইমিগ্রেশন চলছে। তবে তাদের কারো কাছে গেট পাস পাওয়া গেলো না।

এ অবস্থায় কলকাতা দূতাবাসে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে সহযোগিতা করা হলো। অবশেষে দেখা মিললো মধুমতীর। দর্শন সুশ্রী হলেইতো হবে না গুণও বিচার করতে হবে! একসঙ্গে চারশ’ যাত্রী বহন করতে পারে জাহাজটি। সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তবে ছবি তোলা যাবে না।
 
যাত্রীদের কথায় প্রথমবার কিছু ভুল ত্রুটি থাকলেও জলপথ খারাপ চলবে না। বিশেষ করে দুই দেশের সুন্দরবন ভালোভাবে উপভোগ করা যাবে। যাত্রী শুভ্রর কথায়, পশ্চিমবঙ্গের অংশে অনেক গোছানো লাগলো সুন্দরবন। প্রথমবারের জন্য চমৎকার অভিজ্ঞতা। তবে কিছু ভুলত্রুটির জন্য ৬৫ ঘণ্টা লাগলো। না হলে ৪০ থেকে ৪৫ ঘণ্টায় পৌঁছানো যেতো।
 
অন্য যাত্রীদেরও অভিজ্ঞতা ভালো। ভ্রমণ পিপাসুরা সুন্দরবন উপভোগ করতে পারবেন। দুই দেশের বয়স্ক বা অবসরপ্রাপ্তদের জন্য মনোরম পরিবেশ রয়েছে জাহাজের ভেতরে। এছাড়া চিকিৎসার কাজে বড় সাফল্য দেবে মধুমতী। জটিল অস্ত্রোপ্রচার করে কেউ যদি দেশে ফিরতে চান বিশ্রাম নিয়ে ধীরে সুস্থে যেতে পারবেন। তবে ইমিগ্রেশনকে আরও তৎপর হতে হবে। আন্তর্জাতিক হিসেবে ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরটি ইন্ডিয়ার টার্মিনাল বন্দর মোটেও উপযোগী নয়। তবে ভুলত্রুটি শুধরে নিলে সাফল্য দেবে দুই দেশের জলপথ, এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৯
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।