তিনি বলেন, বিজেপির এ জয়কে অনেকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আদর্শিক যুক্তির জয় ভাবতে পারেন। তবে এটাও সত্য, হিন্দু জাতীয়তাবাদী দর্শনের জন্য এটা কোনো বিশেষ জয় নয়।
সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে লেখা এক নিবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন।
অমর্ত্য সেন বলেন, আমাদের বারবার বলা হয়, ভারত বদলে গেছে। মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জওহরলাল নেহরু, মওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো মহান ব্যক্তিদের বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের কোনো বিকল্প নেই। বিজেপির গত পাঁচ বছরের শাসনামলে যা স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, ধর্মের ভিত্তিতে আরো বিভক্ত হয়েছে ভারত।
তিনি বলেন, ক্ষমতার মানদণ্ডে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন কিছু পেয়েছে ঠিকই, তবে মতাদর্শের সংগ্রাম কিছুই পায়নি। বিজেপি কর্মী প্রজ্ঞা ঠাকুর সম্প্রতি মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমিক বলেছেন। এতে নির্বাচনের সময় অস্বস্তিতে পড়েছিল বিজেপি। প্রজ্ঞার বক্তব্যের জন্য তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাও চাইতে হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের যে আসনে প্রজ্ঞা ঠাকুর নির্বাচন করেছেন, সেখানে তিনি জিতেছেন। আজ ভারতীয় সংসদের সদস্য তিনি। অর্থাৎ, এ জয় ক্ষমতার মানদণ্ডের জয়, মতাদর্শের সংগ্রামে নয়।
মোদীর জয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, (নরেন্দ্র মোদী) একজন অগ্নিগর্ভ বক্তা, যিনি ঘৃণা ও বিদ্বেষকে রাজনীতিতে ব্যবহার করে অন্যের চিন্তাকে প্রভাবিত করতে পেরেছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন, যা কংগ্রেস ও অন্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে বহুগুণ বেশি। এর সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে পেয়েছেন, সংবাদমাধ্যমের একতরফা কাভারেজ। নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, বিশেষ করে দূরদর্শনের মতো একটা মাধ্যম শাসক বিজেপিকে সময় দিয়েছে কংগ্রেসের তুলনায় দ্বিগুণ।
‘এছাড়া, গত ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে মোদীর বিমান হামলার নির্দেশে যে জাতীয়তাবাদের উত্থান হয়েছে, তাও নির্বাচনে জিততে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে বিজেপিকে। ’
তিনি বলেন, ভারতের সাধারণ নির্বাচনে যে আতঙ্ক দাঁপিয়ে বেড়িয়েছে, তাকে সুচারুভাবে ব্যবহার করেছেন মোদী। পাঁচ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন নির্বাচনে জেতেন, তখন তার প্রচারের মূল বিষয় ছিল, ভারতীয় অর্থনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করা, সবার জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি, ফসল সবার মধ্যে সুষম বন্টনসহ সহজলভ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো প্রতিশ্রুতি।
অমর্ত্য সেন বলেন, ২০১৯-এর নির্বাচনে মোদী তার সাফল্যের কোনো বড়াই করতে পারেননি। তিনি যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পূরণ করেছেন সামান্যই। ভয়াবহ বেকারত্বে ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হোঁচট খেয়েছে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা থেকে গিয়েছে অবহেলিত। এসবের পরিবর্তে মোদী এবার সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন, ভারতীয়দের উদ্বেগ, ভয় আর আতঙ্কের ওপর। সন্ত্রাসবাদের ভয়, পাকিস্তান থেকে অন্তর্ঘাতের ভয়, ভারতের অভ্যন্তরে বৈরী শক্তির ভয় কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড যুদ্ধ বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছিল। সে সময় নাটকীয় মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল তার জনপ্রিয়তা। ঠিক তেমনি, গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত লড়াই মোদীকে ফের দিল্লির ক্ষমতা দখলে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
ভিএস/একে