এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বহু বছর পর শনিবার (০৩ আগস্ট) বঙ্গবন্ধুর নতুন আবক্ষ ভাস্কর্য প্রতিস্থাপন করেছেন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনাজ ভবনে এটি তৈরি করেছেন শিল্পী লিটন পাল রনি।
উদ্বোধনের পর মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আগের ভাস্কর্যটি খুব অল্প সময়ে তৈরি করা হয়েছিল, ফলে সাদৃশ্য কম ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এটি প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা চলছিল। আজ তা বাস্তবায়িত হলো। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কক্ষে আর কোনো সহযোগিতা লাগলে আমরা তা করবো।
বঙ্গবন্ধুর নতুন আবক্ষ ভাস্কর্যটিতে সাদৃশ্য কতটুকু জানতে চাইলে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার প্রধান তৌফিক হাসান বলেন, ২০১১ সালে কলকাতার যে শিল্পী বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি তৈরি করেছিলেন, সেখানে আমাদের মনে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মুখ পুরোটা আসেনি। মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, চারমাস আগে বেকার হোস্টেল ভিজিট করতে এলে প্রসঙ্গটি ফের তোলা হয়। উনি তখন নিজে উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের শিল্পীকে দিয়ে এটি তৈরি করান। যা আজকে প্রতিস্থাপন করা হলো। তবে এটা আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে।
আকাশবাণী রেডিওর সাবেক সাংবাদিক পঙ্কজ সাহা বলেন, ভাস্কর্যটি ভালো হয়েছে। তবে একটা কথা মনে রাখা উচিত শিল্পী যখন ভাস্কর্য তৈরি করে তা শুধুমাত্র এর মধ্যে মানুষটিকে ফুটিয়ে তোলা তার কাজ নয়। তার নিজস্ব একটা সত্তা আছে। যাকে বলা হয় শিল্পীসত্তা, সেটাও ফুটে ওঠে।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সঙ্গে নানা কাজে যুক্ত কলকাতার অধ্যাপক ইমানুল হক। তার মতে, ভাস্কর্যটা বিষয় নয়, বিষয় হলো শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। আসলে দেখার বিষয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কতোটা পালিত হচ্ছে। কতোটা আদর্শ আমরা রক্ষা করতে পারছি। ভাস্কর্য একটা প্রতীক মাত্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪২ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ইন্টার মিডিয়েটে ভর্তি হয়ে ধর্মতলা স্ট্রিটের বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে ওঠেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত হোস্টেলের কক্ষটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার। ১৯৯৮ সালে ৩১ জুলাই ওই কক্ষটির উদ্বোধন করা হয়। ২০১১ সালে সেখানে নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি। বিদ্যমান ভাস্কর্যটিতে বঙ্গবন্ধুর চেহারা পুরোপুরি ফুটে না ওঠায় বাংলাদেশ তা প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
বঙ্গবন্ধু নতুন আবক্ষটি উচ্চতায় ৩৬ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ২৮ ইঞ্চি। ১৭০ কেজি ওজনের হালকা ধূসর ভাস্কর্যটি তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে সিমেন্ট কাস্টিং। এর শিল্প নির্দেশক মো. আকতারুজ্জামান ও শেখ আসমান।
মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ছাড়াও শনিবার ভাস্কর্য প্রতিস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাবেদ খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এইচএডি/