শুক্রবার (১ নভেম্বর) বইমেলাটি উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশের কলকাতা উপ-দূতাবাস প্রধান তৌফিক হাসান, প্রথম সচিব শামসুল আরিফ, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদসহ বিশিষ্টজনেরা।
উদ্বোধনীর আগে প্রধান অতিথি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম আমার কলকাতায় আসা। তবে আমার বড় ভাই (সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) অনেকবার কলকাতায় এসেছেন এবং এই বইমেলা এর আগে তিনি উদ্বোধন করেছেন। তারই পথ অনুসরণ করে আমার আসা।
‘কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা, ব্যাপারটার একটা আলাদা অনুভূতি আছে। কারণ জাতিগতভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের সবদিক থেকে মিল রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, গত আট বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা হয়ে আসছে। আর এই জন্য মেলার আয়োজক ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ’
কবি শঙ্খ ঘোষ বলেন, আমি কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছি। তাই আমার এই ধরনের অনুষ্ঠানে না আসাই উচিত। কিন্তু শত অসুস্থতার মধ্যেও না এসে থাকতে পারিনা। বাংলা সাহিত্য এবং ভাষা দিয়ে একটি জাতি রাষ্ট্র গঠন করে। সেই বাংলাদেশ সম্পর্কে আমরা অনেক কম জানি। আমার মনে হয় এ ধরনের ‘বাংলা বইমেলা’ সেই অজ্ঞতাকে দূর করবে।
প্রফেসর শামসুজ্জামান খান বলেন, কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা আমার মতে একটা সূচনা মাত্র। এতে কলকাতার বাঙালিরা জানতে পারবে বাংলাদেশের বাঙালিদের। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে কলকাতার বাঙালিদের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমরা বাংলাদেশিরা পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের যথেষ্ট গভীরভাবে অধ্যয়ন করি।
‘কিন্তু বাংলাদেশিদের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের একটা হালকা মনোভাব আছে। আমার মনে হয় এটা ঠিক নয়। আশা করি নবম বাংলাদেশ বইমেলা কলকাতাবাসীর মধ্যকার এই সমস্যা কাটাবে। যতই হোক মনে রাখতে হবে আমরা বাঙালি। ছয় জন বাঙালি নোবেল পেয়েছে। এটা কম গর্বের বিষয় না। ’
নবমবারের মতো বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির আয়োজনে, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের মূল ব্যবস্থাপনায় কলকাতার মোহরকুঞ্জে শুরু হয়েছে ১০ দিনব্যাপী বাংলাদেশ বইমেলা।
মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লেখা ‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি প্রকশনা নিয়ে মোট ৮০টি প্রকাশনা এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে।
এর আগে ২০১৮ সালে ছিল ৬৯টি এবং ২০১৭ সালে ছিল ৪৭টি বাংলাদেশি প্রকাশনা। মেলা চলবে স্থানীয় সময় প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। তবে শনিবার ও রোববার দুপুর ২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। যা শেষ হবে আগামী ১০ নভেম্বর।
মেলায় ৬০টি স্টলে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি বইয়ের সম্ভারের পাশাপাশি বইপ্রেমীদের জন্য প্রতিদিন থাকছে একমঞ্চে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলার শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করছে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতি।
এক সময় এরাজ্যে বাংলাদেশের বইয়ের প্রাপ্তিস্থান ছিল কলকাতার ‘আন্তর্জাতিক বইমেলা’। বহুবার আবেদনের পর কলকাতার বইপাড়ায় বাংলাদেশি বই পাওয়া যায় পাঠক সমাবেশ ও পত্রভারতী প্রকশনায়। কিন্তু তাও বইমেলার মতো এত প্রকাশনা রাখা কখনই সম্ভব হয় না।
এসব কিছুর জেরেই ২০১১ সাল থেকে কলকাতায় পথচলা শুরু বাংলাদেশ বই মেলার। তবে শুরু হলেও নির্দিষ্ট স্থানে মেলাটিকে রাখা যায়নি। বারবার পরিবর্তন হয়েছে স্থান ও সময়। ফলে কলকাতার পাঠকদের কাছে অনেক সময় খবর পৌঁছাবার আগেই শেষ হয়ে যেত বাংলাদেশ বইমেলা।
তবে কলকাতার মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বইমেলা স্থায়ী হবে বলেই প্রত্যাশা বইপ্রেমীসহ সংশ্লিষ্টদের। যেখানে বইপ্রেমীরা একবাক্যে চিনতে পারবে ‘বাংলাদেশ বইমেলা’র স্থান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
ভিএস/এসএ