ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলায় ব্যাপক সাড়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৯
কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলায় ব্যাপক সাড়া বাংলাদেশ বইমেলার স্টল, ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: দিল্লির দূষণ আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উত্তাপের আঁচ খুব একটা পড়েনি কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলায়। বরং মেলার তাকে তাকে সাজানো হাজার হাজার নতুন বাংলা বইয়ের ঘ্রাণ আর শেকড়ের টানে আপ্লুত কলকাতাবাসী। অফিস ফেরত লোকজন থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা চোখ বোলাচ্ছেন বাংলাদেশ নিয়ে শোনা রূপকথার কৌতূহলে। মিলিয়ে নিতে চাইছেন বাবা-দাদাদের মুখে শোনা সোনার বাংলার গল্পগুলো।

কীভাবে পরিণত হয়েছিল ভাষার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র। অথবা কে সেই বঙ্গবন্ধু? বাদ যাচ্ছে না জাফর ইকবালের রহস্য থেকে বাংলাদেশির রেসিপির বইও।

পদ্মার ইলিশ না আসুক ‘ইলিশের ১০১ রেসিপি’ তো আছে মেলাতে। ৩০ বছরের এক নারী কথায় কথায় বিক্রেতাকে বলেই দিলেন, ‘ও এটাকেই ভর্তা বলে। আমরা তো ভাতে বলি। ’

এছাড়া নজর কাড়ছে ডিজিটাল বাংলা ‘বিজয় সফটওয়্যার’ থেকে ‘নতুন প্রজন্মের জয়’র মতো বইগুলোও। আবার রবীন্দ্র-নজরুল, হুমায়ূনের সঙ্গে বেশ কাটতি আছে নতুন সাহিত্যিকদের উপন্যাস, কবিতার বইগুলোতে।

দুইবন্ধু, একজন কলেজ শিক্ষার্থী, অপরজন থিয়েটারের নবপ্রজন্ম, মেলায় ঘুরছিলেন। এ অবস্থায় তাদের কথা কানে উড়ে এলো, ‘এখানে তো বেশিরভাগ বই বাংলা ভাষায়। ভিড় দেখে তো মনে হয় না কলকাতায় বাঙালিরা হারিয়ে যাচ্ছে!’ তাতে নাট্যকর্মীর বক্তব্য, ‘বাঙালি মোটেও হারাচ্ছে না। বাংলা ভাষার ব্যবহার কমেছে। এ রকম মেলাগুলোই জাগিয়ে তোলে ভাষার ব্যবহার। ’

কেমন লাগছে বাংলাদেশ বইমেলা? একজনের মতে, এই বইমেলার গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশই বাড়ছে। ২০১১ সালে প্রথম বাংলাদেশ বইমেলা হয়েছিল গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালার একটা ছোট্ট ঘরে। সেই মেলা রবীন্দ্রসদন-নন্দন চত্বর হয়ে এখন মোহরকুঞ্জে হচ্ছে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি ভাষাভাষীর মানুষ বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হচ্ছেন। আমাদের কাছে বাংলাদেশের সাহিত্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। আমরা আগে মনে করতাম আনন্দবাজার পত্রিকার আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলাদেশি সাহিত্যিকদের বই পড়ব। যেমন- তসলিমা নাসরিন, হুমায়ূন আহমেদ কিংবা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। ধারণা বদলে বাঙালি সমাজের ইতিহাস পড়ার জন্য দিন দিন এই মেলাতে ভিড় হচ্ছে।
স্টলের মধ্যেই গভীর মনোযোগে বই পড়ছে এক কিশোরী, ছবি: বাংলানিউজ অপর এক কলেজ শিক্ষার্থী বালিগঞ্জের রিমা মণ্ডলের মতে, বাংলাদেশের বই বা মানুষ যা-ই বলুন, এক সময়ে কিন্তু আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। যেমন আমি কলকাতায় জন্মালেও আমার বাবা ফরিদপুরের। তাই একটা টানতো আছেই। সে কারণেই এই বইমেলায় আসা। কারণ আমার বাংলাদেশ সম্পর্কে জানা কিন্তু বাবা-ঠাকুরমার কাছেই। তবে আমি বাংলাদেশ বলে আলাদা কালচার মনে করি না। সব বাঙালিরই আলাদা টান থাকা উচিত বাংলাদেশের ওপর। আমার মনে হয় এই বাংলাদেশ বইমেলা আরও বেশি পাবলিসিটির প্রয়োজন। তবেই বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছাবে বাংলাদেশ বইমেলার কথা।

স্কুল শিক্ষার্থী ঊর্যা ঈমান বাংলানিউজকে বলে, আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি প্রতিবছর বাবার সঙ্গে আসি। বাংলাদেশ বইমেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- এখানে কোনো খাবারের স্টল নেই। কলকাতা বইমেলায় দেখা যায় বইয়ের দোকান থেকে বেশি খাবারের। মেলাটা দিনে দিনে খাদ্য মেলায় যেন পরিণত হচ্ছে।

ঊর্যার মুখে এ রকম কথা শুনে জানতে ইচ্ছে করে বাংলাদেশের কী বই সে বেশি পছন্দ করে, এখনো পর্যন্ত কী কিনেছে? ঊর্যা বলে, জোকস-কমিকস, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের আন্দোলন নিয়ে অনেক বই কিনেছি।

এ বিষয়ে কলকাতার বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের প্রধান তৌফিক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, নবম বাংলাদেশ বইমেলার আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রতিবছরই কিন্তু প্রকাশক বাড়ছে। যদিও জায়গা ছোট, তাই অনেক স্টলে দুজন করে প্রকাশক বসাতে বাধ্য হয়েছি। গত তিনবছর ধরে আমরা এই মোহরকুঞ্জে বইমেলা করছি। কিন্তু যেভাবে বাংলাদেশের প্রকাশক বাড়ছে, আমার মনে হয় আরেকটু বড় জায়গা পেলে ভালো হতো। যদিও এখানকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। দেখা যাক আগামীতে কী হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৯
ভিএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।