ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

রূপ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু, জ্বর হলেই প্যারাসিটামল নয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৯
রূপ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু, জ্বর হলেই প্যারাসিটামল নয় মশা

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) পর্যন্ত গোটা রাজ্যে রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার ৮০০। আর মৃতের সংখ্যা ২৪ জন। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর এই অচেনা ছোবল। সামান্য জ্বর হয়। সেটা দু’তিন বা চারদিন থাকার পর পরীক্ষায় ধরা পড়ছে ডেঙ্গু। অথচ আগের মতো তেমন ব্যথাও দেখা দিচ্ছে না শরীরে। তাই শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর রূপ বদলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

দিন তিনেক তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা বোঝা না গেলেও ভেতরে ভেতরে ডেঙ্গুর ভাইরাস কাবু করে ফেলছে। আচমকাই সমস্যা এতটাই জটিল হচ্ছে যে, চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে।

তবে এর জন্য চিকিৎসকরা আবহাওয়ার পরিবর্তনের পাশাপাশি দায়ী করছেন জ্বর হলেই বিনা পরামর্শে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবন করে সাধারণ মানুষের জ্বর কমানোর প্রবণতাকে। এতে জ্বর হয়তো কমে। কিন্তু ডেঙ্গুর কারণে জ্বর হয়ে থাকলে সেই সংক্রমণ শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। তাই চট করে ধরা পড়ছে না রোগটি।

গোপনে বসে থাকা ডেঙ্গু কীভাবে ক্ষতি করছে শরীরের? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুজয় চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনে জ্বরে প্যারাসিটামল খেয়ে স্কুল বা কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকা যায় ঠিকই। কিন্তু জ্বরটা ডেঙ্গুর কারণে হলে ভেতরে ভেতরে রক্তের হেমাটোক্রিট বাড়ে। ফলে কমতে থাকে প্লাটিলেট। প্রথম দিন তিনেক ক্ষতিটা একেবারেই বোঝা যায় না। কিন্তু যখন বোঝা যায় তখন অবস্থা সামাল দেওয়া যায় না।

অপর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু অনেককেই ভেলকি দেখিয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের। তাই জ্বর এলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না। স্কুল বাদ দেওয়ার চেয়ে জীবন বড়। অনেক অভিভাবক দেখেছি, জ্বর হলেও প্যারাসিটামল খাইয়ে স্কুলে পাঠায়। কারণ পরীক্ষা না-কি মিস হয়ে যাবে। অভিভাবকদের বলছি, দয়া করে এটা করবেন না। পরীক্ষার চেয়ে জীবন আগে।

কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৬০টি শিশু চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে ২৭ জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। এরমধ্যে আবার চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তাহলে কি জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে না? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, তা তো বলিনি। সামান্য জ্বর হলেই অনেকেই প্যারাসিটামল খেয়ে নেয়। তাতে দেখা গেছে, আবহাওয়ার কারণে জ্বর সামাল দেওয়া যায়। ফলে ডেঙ্গুর কারণে জ্বর হলে সে মুহূর্তে ডেঙ্গুর ভাইরাস প্রকট হওয়ার সুযোগ পায় না। উপসর্গ শরীরে ঘাপটি মেরে থাকে। তাই বলছি, জ্বর অন্তত ১০০ ক্রস করলে তবেই প্যারাসিটামল খান। এরসঙ্গে টানা ৪৮ ঘণ্টা বাড়িতে বিশ্রামের পাশাপাশি ওই দুদিনে অন্তত পাঁচ লিটার ওরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন (ওআরএস) পানি পান করুন এবং দিনে অন্তত দুবার রক্তচাপ মেপে দেখলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। কেননা, প্লাটিলেট কমলে শরীরে অণুচক্রিকা সঞ্চালনে ডেঙ্গু সামাল দেওয়া সম্ভব। কিন্তু হঠাৎ করে শরীর পানিশূন্য বা রক্তচাপ কমে গেলে তখনই জটিল হচ্ছে সমস্যা।

এ নিয়ে আরেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরুণকুমার মজুমদারের মত, সতর্ক করছি জ্বর হলেই প্যারাসিটামল খেয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে। জ্বর যে সংক্রমণের কারণেই হোক না কেনো পর্যাপ্ত পানি এবং বিশ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা না মানলে সাধারণ জ্বরে পার পেয়ে গেলেও ডেঙ্গুর কারণে জ্বরের ক্ষেত্রে শারীরিক অবনতি অনিবার্য।

কলকাতায় কয়েক বছর আগেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসকে ডেঙ্গুর মৌসুম বলা হত। আবহাওয়ার পরিবর্তনে ডেঙ্গুর চরিত্র বদলে যাচ্ছে। ফলে কলকাতায় বছরের প্রথম ও শেষ অর্থাৎ শীত মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে রাজ্যে।

যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. অজয় চক্রবর্তী বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডেঙ্গু সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনো রাজ্য বা দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে এক শতাংশের মধ্যে মৃত্যুর সূচক বেঁধে রাখতে পারলেই অঞ্চলটির ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বলে ধরা হয়। এদিক থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি এক হাজার ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। যা স্বাভাবিক পার্যায়েই আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
ভিএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।